৪৮তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কলকাতায় অবস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপদূতাবাসের উদ্যোগে আগামী ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
১৭ ডিসেম্বর, বিকেল চারটের সময়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ সরকারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভি। থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চিত্র, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনাসভাও।
বিজয় দিবস আজ বাংলাদেশের। ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আজকের এই মহান দিনকে স্মরণ করছেন তাঁরা।
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানী বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। সেদিন থেকেই বিশ্বের বুকে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামে নতুন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র।
১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখকে ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার।
প্রতি বছর মহান দিবস উপলক্ষে রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রসহ সকল পর্যায়ের গণমাধ্যমে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।বিভিন্ন সংগঠনও আলোচনাসহ শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আয়োজন করে। এছাড়া দেশের প্রতিটি উপজেলায়ও বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ, বিশেষ আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। ঢাকার সাভারে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
বাঙালির রক্তের নেতা মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবিরত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ’৪৮-এ বাংলা ভাষার দাবীতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পথ বেয়ে ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ’৫৬-এর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ’৫৮-এর মার্শাল ’ল বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফার আন্দোলন, ৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থান, ৬-দফা ভিত্তিক ’৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ খ্যাত কালজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণ ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন প্রভূত ঘটনা প্রবাহের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙালির উপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতি।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে এবং পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদ্বয় ঘটে। ১৬ ডিসেম্বর বীর বাঙালির বিজয় দিবস ও বাংলাদেশের জাতীয় দিবস।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সকল দেশপ্রেমিক মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে বরাবরের মতো এবারও যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর এবং উৎসব মুখর পরিবেশে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করবে।