বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁর নয়া দিল্লির বাড়ির ছাদে গর্বের তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করলেন সকাল সকাল। দেশ থেকে নির্বাসিত হবার যন্ত্রণা কুরে কুরে খায় মনকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সর্বক্ষণই নাসরিন হাসিমুখে থাকতেই পছন্দ করেন। তবে ১৫ আগস্ট ভারতের ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের দিন লেখিকাকে আরো একটু বেশি উচ্ছ্বসিত মনে হল। আলোকিত চেহারায় ধরে আছেন জাতীয় পতাকা। অসাধারণ গৌরবময় মুহূর্ত !
তবে এর মধ্যেও পদ্মা-মেঘনার দেশকে যে মনে পড়ছে না তা নয়। মনে খোঁচা দিচ্ছে বাংলাদেশের বিজয় উৎসব! জীবনের সেই আনন্দময় মুহূর্ত! সে সময় ওড়াতেন সবুজের মাঝে লাল সূর্য পতাকা।
ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তসলিমা শেয়ার করেছেন পূর্বের কিছু মুহূর্ত এবং বর্তমানের কিছু সময়। ‘নস্টালজিক’ ভাব হলেও ব্যঞ্জনায় তা প্রকাশ করতে চেয়েছেন তিনি। লিখেছেন…
“১৬ই ডিসেম্বর এলে ছোটবেলায় বাড়ির ছাদে পতাকা ওড়াতাম। পাকিস্তানি শাসকের অত্যাচার থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পতাকা। সে পতাকা ছিল সবুজ, সবুজের ভেতর লাল সূর্য।
আজ ১৫ অগস্ট সকালে বাড়ির ছাদে পতাকা ওড়ালাম। ব্রিটিশের অত্যাচার থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পতাকা।
আমরা কি স্বাধীনতার মূল্য বুঝি? অধিকাংশই তো বুঝিনা। আমাদের দিশি শাসকেরা সেই শাসকদেরই অনুকরণ করেন, যাদের বিরুদ্ধে আমরা একসময় যুদ্ধ করেছিলাম।
তারপরও স্বাধীনতার পতাকা ওড়াও। শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে যে যার ঝাণ্ডা ওড়াও”।
সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন চিরদিনই মুক্তচিন্তা, সমতার পক্ষে লড়েছেন, লড়ছেন। অন্যতম আপোসহীন নারীবাদী লেখিকা লেখার মাধ্যমে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন একই সঙ্গে বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ে না।
আজ ভারতের স্বাধীনতা দিবসে তিনি বাংলাদেশের বিজয় উৎসবের কথা যেমন উল্লেখ করেছেন একই সঙ্গে উল্লেখ করেছেন ভারতের স্বাধীনতার কথা।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালিত হয় বিজয় উৎসব হিসেবে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনির প্রায় ৯১,৬৩৪ জন সদস্য বাংলাদেশ-ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত রক্তের বিনিময়ে ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে।
স্বাধীনতা তো জনগণ পেয়েছে, কিন্তু দেশি শাসকরা তো সেই পূর্বের পথই অনুকরণ করছেন। অভিযোগ তো মাঝে মাঝেই ওঠে। জনগণ আজো স্বাধীনতা না হোক, নির্যাতন, অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে, করতে হচ্ছে। দেশের মানুষকে সমস্ত শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করতেই হবে। এখানেই স্বাধীনতার মূল্য।
তসলিমার এই বার্তা যেন বুঝিয়ে দিল দেশের পতাকা মানেই তা স্বাধীনের পতাকা। স্বাধীন হতে চাইলে নিজের পছন্দ মতো পতাকা তুলে নিতে হয়। বুঝিয়ে দিতে হয়, স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ। তাই তো তিনি বার্তা দিলেন, শাসকদের অনুকরণ নয়, নিজের মতো বাঁচতে হবে, মনকে স্বাধীন করতে হবে, স্বাধীন করতে হবে।