বিতর্কিত এবং নারীদের নিয়ে ঘৃণ্য মন্তব্য করা অভিনেতা তাপস পাল মারা গেছেন।
মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মঙ্গলবার ভোররাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই অভিনেতা। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬১।
বিগত ২৮ জানুয়ারি তিনি মুম্বই গিয়েছিলেন।
সেখান থেকে পরবর্তী ১ ফেব্রুয়ারি বান্দ্রার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ভেন্টিলেশনে।
৬ ফেব্রুয়ারি তাপস পালকে ভেন্টিলেশন থেকে বের করে আনা হয়।
যদিও ১ ফেব্রুয়ারি তারিখেই তাঁর মেয়ে সোহিনী পালের কাছে, মার্কিং যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিমানে ওঠার পূর্বেই বুকে প্রচণ্ড যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকেন।
শেষপর্যন্ত আজ ভোর ৩টে ৩৬ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
অভিনেতার মৃত্যুতে শোকস্তদ্ধ পুরো টলিউড জগৎ।
অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক বলেন, “বড়ই অসময়ে চলে গেল। ও আমার ভাইয়ের মত ছিল।”
পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী শোকপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, “তাপস আমার বন্ধু ছিল। পারিবারিক সম্পর্ক ছিল ওঁদের সঙ্গে। ওঁর বিয়েতেও গিয়েছি। খাওয়াদাওয়া ওঠাবসা সবই ছিল। কি বলব, ভাষা হারিয়েছি। তবে ও খুব আনন্দ করে কাজ করত। আমাদের সঙ্গে নেই ভাবতেই পারছি না।”
উল্লেখযোগ্য এবং জীবনে মর্মান্তিক সত্য একটি কথা হলো মানুষ এই পৃথিবীতে না থাকার পর তাঁর অভাববোধ হয়।
আসলে জীবনই এমন। কিন্তু বেঁচে থাকাটা যদি বেঁচে থাকার মতো হয় অন্যকে আনন্দ, সুখ দেওয়ার মতো হয় তাহলে তাঁকে চিরদিন অন্তরের খাতায় লিখে রাখে মানুষ।
২০০৯ সালের পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে সাংসদ হয়েছিলেন তাপস এরপর ২০১৪ সালের আবারও জয় হাসিল করে নিয়েছিলেন।
কিন্তু চেয়ার জয় করলেও মানুষের চোখে পড়ে গিয়েছিলেন একেবারে।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের কয়েক মাস পর কৃষ্ণনগরের চৌমুহা গ্রামের এক বিবাদ মেটাতে গিয়ে বিতর্কিত এবং অবান্তর মন্তব্য করেন তিনি।
বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ির মহিলাদের ধর্ষণ করিয়ে দেওয়ার ভয়ানক হুমকি দিয়েছিলেন তাপস। বলেছিলেন, “বাড়িতে ছেলে ঢুকিয়ে দেব, রেপ করে দিয়ে চলে যাবে।”
সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তাঁর অসামাজিক; পুরুষতান্ত্রিক বার্তা। ধিক্কার পড়ে চারদিকে।
নিজেকে ‘চন্দননগরের মাল’ বলে পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘তাপস পাল অনেক বড় রংবাজ’।
বিতর্ক শুধুই বিতর্ক নয়। এরপর চিট ফাণ্ড কেলেঙ্কারিতে তিনি জড়িত ছিলেন।
রোজভ্যালি কাণ্ডে জড়িত অভিনেতা তাপসকে গ্রেফতার করে সিবিআই।
ভুবনেশ্বর জেলে বন্দী ছিলেন বহুদিন।
শেষপর্যন্ত শারীরিক অসুস্থতার জন্যে অধিকাংশ সময় তাঁকে কাটাতে হয়।
শেষ সময় তাপস পালের ছবি দেখে চেনার উপায় ছিল না যে ইনিই তিনি কিনা!
স্ত্রী এবং কন্যার মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাপস পাল। মাথায় চুল নেই। পরনে হাতা কাটা লালা গেঞ্জি ও ট্রাওজার, চোখে চশমা এবং পায়ে হাওয়াই চটি।