যে মুহূর্তে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলমান অধ্যাপকের সংস্কৃত পড়ানো নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হয়েছে সে মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির সংস্কৃত বিভাগে একজন মুসলমান অধ্যাপককে নিযুক্তি দিয়েছে।
মঙ্গলবার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে সংস্কৃতের সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ করা হয়েছে রমজান খান ও গণেশ টুডুকে।
স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে পরিচালিত রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের এই নিযুক্তি যথেষ্ট সহনশীলতা, ধর্মনিরপেক্ষতার পরিচয়। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীশ্রী মা সারদা, মহান মনীষী বিবেকানন্দের ছিল মানবতাবাদ প্রচার। হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নয়।
মুসলমান অধ্যাপকের মুক্তমনে সংস্কৃত বিষয়ে পড়াশুনা এবং শেষ অবধি অধ্যাপক আহমেদকে রামকৃষ্ণ মিশনে নিযুক্তি দিয়ে দু-পক্ষই সমান উদারতা, ধর্মীয় হিংসার উর্দ্ধে উঠেছেন।
ধর্ম নিয়ে খেলা, ধর্ম নিয়ে শত্রুতা অনেক হয়েছে। এই টুকরোকে পূরণ করার একমাত্র মাধ্যম মানব ধর্মে বিশ্বাস করা। এই মূলমন্ত্র পূর্ণ, একতা, ধৈর্য, সভ্যতার মন্ত্র। হিংসা-বিদ্বেষ ছেড়ে কোন ইসলাম ধর্মের মানুষ যদি সংস্কৃতে পণ্ডিত হয়ে ওঠেন, উঠতেই পারেন। বর্তমানের ঘৃণার স্থান থেকে উর্দ্ধে তো তিনি উঠেছেন! সহনশীলতা সব পক্ষের জরুরি।
২০১৮ সালেই রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরকে দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঘোষণা করে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।
বিদ্যামন্দিরে মুসলিম অধ্যাপক নিয়োগ এ বছরই প্রথম নয়।
১৯ বছর পূর্বে অর্থাৎ, ২০০০ সালে শামীম আহমেদকে বিদ্যামন্দিরের দর্শন বিভাগের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। মহাভারতের উপর ছিল তাঁর গবেষণা।
শামিম বর্তমানে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। আহমেদের সাথে ফরিদুল রহমানকেও ওই বিভাগে নিয়োগ করা হয়েছিল একই সময়।
ধর্ম কোন ছাড়। এ তো আকাশের টুকরো টুকরো মেঘ। আমরা সকলে গ্রহণ করবো সম্পূর্ণ আকাশটা।যা মানবতাবাদ নামে পরিচিত।
ইসলাম, বৌদ্ধ, হিন্দু, ইহুদি, জৈন, নারী-পুরুষ বৈষম্য কাম্য নয় কোথাও। আমরা সকলে দেখব তিনি মানুষ হিসেবে কতটুকু সৎ।
অধ্যাপক নিযুক্তি প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুভিরানন্দ বলেন, “আমরা প্রকৃতির বহুত্ববাদে বিশ্বাসী। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সর্বদা সমাজের সর্বস্তরে সম্প্রীতির প্রচারই করে গেছেন।”
পাশাপাশি রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের উপাচার্য স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ বলেন, “আমরা সহনশীলতা এবং সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার অনুশীলন করি। স্বামীজি সর্বজনীন ধর্ম সম্পর্কে কথা বলতেন এবং আমরা বাস্তবে এটি অনুশীলন করি।”