পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি যতই নিজে রাস্তায় নেমে নির্বাচনের পূর্বে সাধারণ মানুষের খোঁজ খবর নেবার চেষ্টা করুন না কেন, তাঁর কোন নাটকই শেষ পর্যন্ত দর্শকের হাততালি পাবে না। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়।
বিধানসভা নির্বাচনের আর খুব বেশি দেরি নেই। তার আগেই গরিবরা পান্তাভাত খাচ্ছে নাকি মাংস ভাত। তার খোঁজ নেবার প্রয়োজন হয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোর!
বুধবার ওডিশা সীমান্ত লাগোয়া একটি গ্রামে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগ শুনলেন। তাঁদের বাড়ি করে দেবার আশ্বাসও দিতে শোনা গেল। নাটকের ক্লাইমেক্স এখানেই হয়নি। বস্তিবাসীদের বস্ত্র এবং বাচ্চাদের লজেন্সও বিতরণ করলেন নিজে হাতে।
এমনকি পাশের এক মুদির দোকানে গিয়ে অবলীলায় চা বানিয়ে নিজেই থালায় করে পরিবেশন করলেন কর্মীদের মাঝে।
Sometimes the little joys in life can make us happy. Making and sharing some nice tea (cha/chai) is one of them. Today, in Duttapur, Digha | কখনো জীবনের ছোট ছোট মুহূর্ত আমাদের বিশেষ আনন্দ দেয়। চা বানিয়ে খাওয়ানো তারমধ্যে একটা। আজ দীঘার দত্তপুরে। #Bangla pic.twitter.com/cC1Bo0GuYy
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) August 21, 2019
‘চা’ শব্দে যদিও মমতার অ্যালার্জি রয়েছে, কিন্তু এখন আর উপায় নেই। মোদিজির পথই অবলম্বন করলেন শেষ অবধি। তবে ‘চা’ বানালেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গুণ আহরণ করা সম্ভব নয়। একথা জানিয়ে কটাক্ষ করেছেন বহু লোক সোশ্যাল মিডিয়ায়।
হুটহাট কথা বলায় অভ্যস্ত বাংলার ‘দিদি’ প্রতিটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদিকে প্রকাশ্যে অথবা কখনো নাম না করে শাণিত ভাষায় কটাক্ষ করতে কখনোই ছাড়েননা। তা সে ঈদের মঞ্চই হোক কিংবা স্বাধীনতা দিবস।
মোদি ‘চা-ওয়ালা’ বহুবার এমন কটাক্ষ করতে শোনা গেছে তাঁকে। অথচ সেই চা-ওয়ালাই দেশের জন্যে একের পর এক আত্মবিশ্বাসী কাজ করে যাচ্ছেন। ৭০ বছরেও যে কাশ্মীরকে মূলভারতের সঙ্গে যুক্ত করতে অসমর্থ ছিল সকলে, তাই করে দেখিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান শত কোণঠাসা করার চেষ্টা করে শেষে নিজেই এক কোণায় বসে পড়েছে। লাভ নেই।
তাই সততার বিরুদ্ধে কোন নাটক করেই মমতা চেয়ার রক্ষা করতে পারবেন না।
মুকুল লেখেন, ‘মিথ্যে এবং পূর্ব পরিকল্পিত নাটক করে আপনি নিজের চেয়ার বাঁচাতে পারবেন না। বাস্তব হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে আপনি গণতন্ত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন এবং আপনার গুন্ডাবাহিনী ক্ষমাহীনভাবে বিরোধী দলের ১০০-র বেশি কর্মীদের খুন করেছে।’
বলা বাহুল্য,মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে এবারই প্রথম সাধারণ মানুষের দরজায় গিয়ে তাঁদের খোঁজ নিয়েছেন এমন নয়, তিনি পূর্বেও যথেষ্ট এমন কাজ করেছেন। কিন্তু তখন তিনি করেছিলেন হৃদয়ের ভালবাসা ও আন্তরিকতার সাথে। কিন্তু ক্রমে ক্রমে তা পরিণত হয়েছে হিংসা, দলাদলিতে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে মমতার কার্য কেবল চেয়ার বাঁচানোর জন্যে। মুকুল প্রকারান্তরে তাই বলতে চেয়েছেন।
গ্রামবাসীরা আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে। কারণ সমাজে গরিব মানুষকে স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে লাথি মারা যেমন খুব সহজ। তেমনই ফের প্রয়োজন পড়লে তাঁদের বুকে জড়িয়ে নেয়াও তেমনই সহজ। কারণ ওই মানুষগুলো একটু বুকের ওম পেলেই ভুলে যায় সেদিনের ‘লাথি’!
মনে লোভ নামক রিপু যতক্ষণ উগ্র হয়ে না উঠছে, ততক্ষণ সব কাজই হয় মমতার সাথে। কিন্তু লোভ এলেই সে কার্যে দেখা দেয় বিক্ষোভ, রেষারেষি।