ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা, ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ, আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই আহ্বান মূর্ত হয়েছে ভারতীয় তথা বাঙালি বিপ্লবী শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর চরিত্রে।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বকনিষ্ঠ বীর শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর আজ ১১১তম মৃত্যুবার্ষিকী।
বিপ্লবীর চরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Tribute to Khudiram Bose, freedom fighter, on the anniversary of his martyrdom
শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর মৃত্যুদিবসে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও প্রণাম pic.twitter.com/0brteKdBX3
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) August 11, 2019
১৯০৮ সালের আজকের দিন (১১ আগস্ট) ভোর ৫ টায় ব্রিটিশ সরকার ছিনিয়ে নিয়েছিল ১৮ বছরের অগ্নিপুত্র ক্ষুদিরাম বসুর প্রাণ। দেয়া হয় ফাঁসি। কারাগারের বাইরে তখন সহস্র কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি।
ব্রিটিশ ক্ষুদিরামের প্রাণ হরণ করেছে, কিন্তু তাঁর আদর্শকে নয়। জগতে যুগে যুগে হাজারো ক্ষুদিরাম জন্ম নিচ্ছেন অন্যায়ের ঘাড় ভেঙে দেবার জন্যে।
বাঙালি সন্তান ক্ষুদিরামকে ফাঁসির মঞ্চে ঝোলানোর পূর্বে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তাঁর শেষ ইচ্ছা কি?
এই প্রশ্নে ক্ষুদিরাম যে উত্তর দিয়েছিলেন, শুনে বুক কেঁপে উঠেছিল কারা কর্তৃপক্ষের।
ধুমকেতু ক্ষুদিরাম বলেছিলেন, “আমি ভাল বোমা বানাতে পারি, মৃত্যুর আগে সারা ভারতবাসীকে সেটা শিখিয়ে দিয়ে যেতে চাই”।
মেদিনীপুরেই ঘটেছিল তাঁর বিপ্লব জীবনের অভিষেক।
১৯০২ এবং ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার-নিবেদিতা মেদিনীপুর ভ্রমণ করেন। তাঁরা স্বাধীনতার জন্যে জনসমক্ষে ধারাবাহিক বক্তব্য রাখেন এবং বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গোপন অধিবেশন করেন, তখন কিশোর ছাত্র ক্ষুদিরাম এই সমস্ত বিপ্লবী আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মেদিনীপুরের নারাঠা কেল্লায় শিল্প প্রদর্শনী হয়। সেখানে তৎকালীন যুগের বিখ্যাত রাজদ্রোহমূলক পত্রিকা সোনার বাংলা বিলির দায়ে পুলিশ তাঁকে পাকড়াও করতে যায়। কিন্তু ক্ষুদিরাম পুলিশকে মেরে পালিয়ে যান। পরে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
ব্রিটিশ শাসনের মূলে কাঁপন ধরাতে কিংসফোর্ডকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন বিপ্লবীরা। আলিপুর প্রেসিডেন্সি বিচারালয়ের মুখ্য হাকিম ছিলেন।
বিপ্লবীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে কিংসফোর্ডকে মজফফরপুর বদলি করা হয়। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল চাকী স্বয়ং কিংসফোর্ডের বাড়ির পাশে হোটেলে থেকে নিরীক্ষণ করতে থাকলেন কিংসের গতিবিধি।
১৯০৬ সালের ৩০ এপ্রিল ঘটে যায় সেই ঘটনা। রাত ৮ টা নাগাদ ব্রিজ খেলা শেষ করে কিংসের খেলার সঙ্গী আইনজীবী কেনেডির স্ত্রী এবং তাঁদের কন্যা ঠিক কিংসের মতোই হুবহু একটি গাড়ি নিয়ে রওয়ানা দিলেন।
গাড়িটি কিংসের বাসভবনের ফটক পার হতে না হতেই শহরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিল প্রচণ্ড বোমার আওয়াজ। ব্যর্থ হল কিংসফোর্ডকে হত্যার সমস্ত চেষ্টা। যার গাড়ি ওড়ানোর চেষ্টা, তাঁর গাড়িটি দাঁড়িয়ে ছিল কিছু দূরে অক্ষত অবস্থায়। কেনেডির স্ত্রী ও মেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
বোমা নিক্ষেপ করেই দুই বিপ্লবী দৌড় লাগালেন। পরদিন সকালে গ্রেপ্তার হলেন ক্ষুদিরাম। কর্মী প্রফুল্ল চাকীকেও আটক করে পুলিশ। বিপ্লবী চাকী নিজের পিস্তলের গুলিতেই নিজে শহীদ হয়ে গেলেন।
ব্রিটিশ বিপাকে পড়ে যায় ক্ষুদিরামকে নিয়ে। বাইরে ক্রমশ উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ক্ষুদিরামের কণ্ঠে শোনা যায় বজ্রনিনাদ ধ্বনি বন্দে মাতরম…।
চোখের জলে নয়, সারা ভারতের জনগণের মনে আজো জ্বলছে ১১ আগস্ট। ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়ে যাওয়া বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ আমাদের শিখিয়ে গেছেন, মৃত্যুরে আমি করিব না ভয়।
দেশের প্রত্যেক মুক্তিকামী মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকবেন ক্ষুদিরাম।
মেদিনীপুর শহরের কাছাকাছি (বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামের অগ্নিপুত্র ক্ষুদিরাম বসুর চরণে থাকল ‘নর্থ ইস্ট নাও’ পরিবারের পক্ষ থেকে ভক্তিবিনম্র প্রণাম।