উদ্বেগে তাকায়ো না বাইরে/ যদি মাতে মহাকাল/ উদ্দাম জটাজাল। ইচ্ছে থাকলে পঙ্গুও গিরি লঙ্ঘন করতে পারে! সে প্রতিবন্ধকতা মনেরই হোক কিংবা শারীরিক। ফের সে কথা হলফ করে প্রমাণ করে দিলেন বাংলার লক্ষ্মী ঘোষ।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার হাওড়ার হীরের মেয়ে লক্ষ্মী জয় করেছেন ইউরোপ মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এলব্রুস ।
গত ২০ আগস্ট ইউরোপ মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ রাশিয়ার এলব্রুস (৫ হাজার ৬৪৫ মিটার) জয়ের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। ২৭শে আগস্ট রাশিয়ার সময় সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে তিনি লক্ষ্যে পৌঁছে যান।
ইউরোপ মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে বাঙালি মেয়ের আরোহণ।
লক্ষ্মীর বাবা তুষার ঘোষ ভ্যানচালক। টানাপোড়েনের মাঝেও বড় হলেও স্বপ্নকে কোনদিনও ছোট করেননি। ছোটবেলা থেকেই ছিল পাহাড়ে চড়ার বড্ড নেশা লক্ষ্মীর। সে নেশায় ক্রমে ক্রমে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েন বর্তমানে হোমগার্ড হিসেবে বারাসত জেলা পুলিশ লাইনে থাকা লক্ষ্মী।
পাহাড়ে চড়ার জন্যে বেসিক, অ্যাডভান্স মাইন্টেনিয়ারিং কোর্সের পাশাপাশি মেথড অব ইন্সট্রাকশন প্রভৃতি বহু কোর্স করেছেন।
বামিহাটি তালতলা গ্রামের মেয়েটি লালন করতে থাকেন মনের মাঝে একদিন পৌঁছাবেন শীর্ষে।
২৭শে আগস্ট তা প্রমাণ করে দিলেন যে প্রতিবন্ধকতা, অর্থাভাব কোন সমস্যাই নয়। ‘যে পারে সে আপনিই পারে, পারে সে ফুল ফোটাতে।’
চারদিকে যে হারে কন্যাশিশুদের নির্যাতন করা হচ্ছে, ধর্ষণ করে উচ্ছিষ্টের মতো ফেলে দেয়া হচ্ছে, ঘরে মেয়ে জন্ম নিলে দাদু-ঠাকুমা-বাবার মুখ কালো হয়ে উঠছে, সে মেয়েরাই আজ বিশ্বের শীর্ষ শৃঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছে একমাত্র নিজের মনোবলে, জয় করছে মহাকাশ।
এই মেয়েরাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজকে শিক্ষিত করে তোলার প্রেরণা, পথ-প্রদর্শক। তবুও কেন শেখে না সমাজ?