বাংলা তথা বিশ্ব আজ ২৮ বছর সত্যজিৎ ছাড়া! বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের আজ ২৮ তম প্রয়াণ দিবস।
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সত্যজিৎ ছিলেন বহুমুখী এবং তাঁর কাজের পরিমাণ বিপুল। তিনি ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী (১৯৫৫) ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে, এর মধ্যে অন্যতম ১৯৫৬ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া “শ্রেষ্ঠ মানব দলিল” পুরস্কার।
শ্রেষ্ঠ বাঙালি সত্যজিৎ রায়ের ভেতরে কোন গুণ ছিল না?
চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে কল্পকাহিনী লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক। বর্ণময় কর্মজীবনে তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যার মধ্যে বিখ্যাত ১৯৯২ সালে পাওয়া একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার (অস্কার)। এছাড়াও ৩২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
ভারতীয় শিল্পের প্রতি তাঁর নিখাদ ভালবাসার পরিচয় পাওয়া যায় সত্যজিতের পুনঃপুন অজান্তা, ইলোরা এবং ইলিপানথা গুহা ভ্রমণের মধ্য দিয়ে।
তাঁর মাতা সুপ্রভা রায় ছিলেন একজন সঙ্গীতশিল্পী ও হস্তশিল্পে পারদর্শী এবং তাঁর পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীও ছিলেন প্রখ্যাত লেখক, শিশু সাহিত্যিক, চিত্রকর, আলোকচিত্রী, ব্লক ডিজাইনার এবং শিশুতোষ পত্রিকা সন্দেশ (১৯১৩)-এর সম্পাদক। প্রথম জীবনে সত্যজিৎ ওরিয়েন্টাল আর্টের খুব ভক্ত ছিলেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় একজন অলঙ্করণ শিল্পী হিসেবে। বিভিন্ন কোম্পানিতে তিনি কাজ করেন। এমনকি জনপ্রিয় ভারতীয় কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেরা কাজ ‘পথের পাঁচালি’র ছোটদের ভার্সন ‘আম আটির ভেঁপু’র অলঙ্করণের কাজও করেন তিনি। আর ওই বইয়ের অলঙ্করণ করতে গিয়ে সত্যজিৎ বইটির গল্পের দ্বারা প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত হন।
পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায় ফ্যান্টাসি, সাইন্স ফিকশন, গোয়েন্দা কাহিনী এবং ঐতিহাসিক ঘটনাসহ ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর কাজ করেন।
মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে ১৯৮৩ সালে। ঘরে বাইরে ছবির কাজ করার সময় সত্যজিৎ রায়ের হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর থেকে তাঁর কাজের গতি ধীর হতে থাকে।
১৯৯২ সালে দ্যা অ্যাকাডেমি অব মোশান পিকচার আর্টস অ্যান্ড সাইন্স সত্যজিৎকে সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করে। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা। ১৯৯২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সত্যজিৎ রায় হাসপাতালে ভর্তি হন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের বেডে কাটে তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো। এ বছরের ২৩ এপ্রিল চলচ্চিত্র জগতের মেধাবী এ বরপুত্রের জীবনাবসান ঘটে।