বাংলাদেশের কবি, প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরি তথা নির্মলেন্দু গুণ নামেই যিনি সমধিক পরিচিত, তাঁর কিছু স্বপ্ন ছিল । সে স্বপ্ন স্বাধীনতার , সে স্বপ্ন মুক্তির ।
‘আমার কিছু স্বপ্ন ছিল, আমার কিছু প্রাপ্য ছিল,
স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতার’ ।
আজ ২১ জুন। কবি নির্মলেন্দু গুণের ৭৫তম জন্মদিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা কবিতার প্রধান দিকপালদের একজন তিনি।
কবিতার পাঠক মাত্রই জানেন, কবিতা মনের ক্ষেত্রে কতটা ওষুধের কাজ করে । কবিতা কতটা মন ছুঁয়ে যেতে পারে । আর তা যদি আধুনিক কবিতার প্রাণপুরুষ নির্মলেন্দু গুণের কবিতা হয়, তাহলে চোখ বন্ধ করে হাতে তুলে নিতে হয় অক্ষরের প্রজাপতি ওড়ানো কবি নির্মলেন্দুর কবিতা সমগ্র ।
১৯৭০ সাল অর্থাৎ সেই কাল যে কালে চলছিল চরম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, প্রকাশিত হল কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রেমাংশুর রক্ত চাই প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
এ-গ্রন্থে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতার উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা, শ্রেণীসংগ্রাম, সামরিকতন্ত্র, ও স্বৈরাচারী শাসনের বিরোধিতা, প্রেম-বিরহ, নারী, জীবন-প্রকৃতি আর স্বপ্ন দেখার অলীক ঘোর তার কবিতার প্রাণশক্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা কবিতার প্রধান দিকপালদের একজন তিনি।
কবি নির্মলেন্দু গুণের পারিবারিক নাম নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী। নির্মলেন্দু গুণেই তিনি সমধিক পরিচিত। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনীও লিখেছেন। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রেমাংশুর রক্ত চাই প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ-গ্রন্থে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতাটি ব্যাপক জরপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এছাড়াও তার স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য। তিনি ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি, ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।
কবির জন্ম ১৯৪৫ সালে কাশবন, বারহাট্টা, নেত্রকোণায়।
নির্মলেন্দু গুণের বেশিরভাগ কবিতায় অত্যাধুনিক দৃষ্টান্তবাদিতা পরিলক্ষিত। তার নারীপ্রেমার্দ্র কবিতাগুলো ভারতীয় আবেগ-অনুভূতি সংলগ্ন। তিনি দেশপ্রেমের যে-দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা সত্যিই বিরল।
লেখনী চলছে জলের স্রোতের মত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে । কিন্তু সে লেখার দৃঢ়তা বজ্রকঠিন ।
তিনি লিখেছেন,
‘জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলংগশিশুর মত বেরিয়ে এসেছো পথে, স্বাধীনতা তুমি দীর্ঘজীবী হও’ ।
যেমন কঠোর, তেমনি কোমল তাঁর ভালবাসা, প্রেমের কবিতা যেন বুক থেকে খসে পড়ে এক একটি তারা । কবি বলেনঃ
‘আবার যখনই দেখা হবে, আমি প্রথম সুযোগেই বলে দেব স্ট্রেটকাটঃ ‘ভালোবাসি’ ।
আহা ! হৃদয় থেকে চুইয়ে-চুইয়ে পড়ে জল এমন ভালোবাসায় !
সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পদক (১৯৮২), একুশে পদক (২০০১) এবং স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৬) পেয়েছেন।