প্রাচীনকালে তাঁত বুনন প্রক্রিয়ায় কার্পাশ তুলার সুতা দিয়ে মসলিন নামে সূক্ষ্ম বস্ত্র তৈরি হতো এবং মসলিনের উপর যে জ্যামিতিক নকশাদার বা বুটিদার বস্ত্র বোনা হতো তারই নাম জামদানি শাড়ি।
ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই জামদানি শাড়ির কদর সেই প্রাচীনকাল থেকেই। ঢাকাই মসলিনের পরেই ঐতিহ্যবাহী শাড়ী জামদানির গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনস্বীকৃত। বাংলাদেশের তাঁতিদের অসামান্য দক্ষতা এবং সুনিপুতায় শতশত বছর ধরে তৈরি কারুকার্যময় ঢাকাইয়া জামদানির খ্যাতি বিশ্বজোড়া । সব বয়সী বাঙালি নারীর কাছে রয়েছে জামদানি শাড়ির চাহিদা। এ কারণে জামদানি শাড়ির বেচাকেনা বাংলাদেশে সারা বছরই চলে সমানভাবে।
ঢাকাই জামদানির ইতিহাস ঢাকার ইতিহাসের চেয়েও পুরনো। ১৬১০ সালে সুবেদার ইসলাম খান যখন তার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন, তখনই ঢাকার ইতিহাসের জন্ম। অথচ জামদানির ইতিহাস তার চেয়েও পুরনো। মুসলমানেরাই জামদানির বুননকর্মটির প্রচলন করেন এবং এখনো অতীত ঐতিহ্যকে ধরে টিকে রয়েছে।
ঢাকার সোনারগাঁও, ধামরাই, বাজিতপুর ছিল জামদানি ও মসলিন কাপড়ের জন্য ঐতিহাসিক স্থান। জামদানি শাড়ির প্রকৃত অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছিল মধ্যযুগের মুসলিম আমলেই। আসলে পারস্য ও মুঘল এ দু’টি মিশ্র সংস্কৃতির ফসল এই শাড়ি। প্রাচীনকাল থেকেই এ ধরনের কাপড় তৈরির জন্য শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় বরাবর পুরনো সোনারগাঁও অঞ্চলটিই ছিল ব্যাপক উৎপাদন কেন্দ্র। বর্তমানে বাংলাদেশে রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও এবং সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলায় জামদানির কাজ হলেও সোনারগাঁও উপজেলা জামদানিপল্লী হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত রয়েছে।
উৎপাদিত জামদানি শাড়ি বিক্রির প্রসিদ্ধ হাট ছিল রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া। বর্তমানে ঢাকা ডেমরার শীতলক্ষ্যা নদীতীরের বিসিক শিল্প নগরীতে হাট বসে। প্রতি শুক্রবার সকালে হাট বসে চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। হাটের পাশেরই গড়ে উঠেছে মার্কেট। বিক্রয়কেন্দ্রে সারা মাস জামদানি বিক্রি হলেও জামদানির হাটে সপ্তাহের এক দিন শুক্রবার শাড়ি বিক্রি করেন তাঁতিরা। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে রয়েছে জামদানি শাড়ির দোকান। ওইসব দোকানে বিক্রি হয় ঢাকাই জামদানি শাড়ি।
বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বমূলক তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শিল্প। জামদানি বাংলাদেশের ঐতিহ্য আর এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রথমেই সরকারকে সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই যুগ যুগ ধরে টিকে থাকবে ঢাকাই এই জামদানি শিল্প।