দেশদ্রোহী, শত্রু, প্রভৃতি বহু বিশেষণে ভূষিত হলেন বাংলাদেশের প্রিয়া সাহা । তাঁকে নিয়ে তোলপাড় সারা দেশের মানুষ । কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রিয়ার ছবির পাশে ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়ে ছবি শেয়ার করছেন ।
আজ সোমবার, প্রিয়ার বিরুদ্ধে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার জনগণ গর্জে উঠেছেন । দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যে তাঁর বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ।
ইতিমধ্যে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রদ্রোহের পৃথক দুটি মামলা খারিজ করেছে আদালত । খারিজ আদেশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। সেই অনুমতি এখানে নেই। এ ছাড়া মামলার বাদীরা সরকারের কোন ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও নন।
এদিকে , আজ ২২ জুলাই, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ‘কটূক্তি’ করার অভিযোগে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারক আস-শামস জগলুল হোসেনের আদালতে মামলা করা হয়েছে।
আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন, গৌতম কুমার এডবর নামক ঢাকার ভাষাণটেকের এক সমাজকর্মী ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ আসলে কতটুকু যুক্তি রয়েছে ?
ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ১৯৪৭ সাল থেকে আদৌ কি নিরাপদ বাংলাদেশে ?
১৯৪৭ সাল থেকেই ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে হিন্দু সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর লোকেরা নির্যাতিত হয়ে আসছেন। কিছু ঘটনা প্রচার পায়, কিছু থেকে যায় অন্ধকারের গুহায় ।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রথম আলো’র পাতায় বলেছিলেন, “রাষ্ট্রের প্রতি অনাস্থার কারণে অনেক সংখ্যালঘু দেশ ত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন, এটি দুঃখজনক। কিছুদিন পর পর সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, এটি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে”।
‘যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব ব্যবধান, যেখানে মিশেছে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান’ ।
তাহলে নজরুল ইসলামের বাণী কি আজ গুমরে মরছে ? সেই সমতার বাণী কতদিন জোর করে নিজেকে ধরে রাখবে ?
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে টার্গেট করে জাতিগত নির্মূলীকরণের খেলায় মেতেছিল পাকিস্তানি বাহিনি আর তাঁদেরই পোষা বাংলাদেশি দোসর আলবদর, রাজাকার ও আল শামস নামক বাহিনি ।
প্রিয়া সাহা । তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন । ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে আর্জি রেখেছেন, ‘আমাদের বাঁচান’ ।
প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদেও লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।’ এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর হারিয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।’
বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিন প্রিয়া সাহার স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে টুইটারে লিখেছেন, ট্রাম্পকে প্রিয়া সাহা যা বলেছেন, কমই বলেছেন। খুব মাপা সময়। ভয়াবহতা বর্ণনা করার সময় তাই পাননি । এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিৎ প্রিয়াকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান করা ।
Priya Saha may be used wrong word 'disappeared',but the number of missing people is, of course, many millions. Muslim fanatics are furious at her. Hasina should provide Priya Saha security. Hindus were 29.7 of the total population during 1947,they are now only 9.7%. Not alarming?
— taslima nasreen (@taslimanasreen) July 22, 2019
এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রিয়া সাহার উক্ত যুক্তিকে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত বলেই মনে করছেন ।
প্রিয়া সাহার ব্যাপারে সরকার শামুকের গতিতে এগোচ্ছে। তিনি এমনও বলেন, সরকার মশা মারতে কামান দাগবে না ।