বিষয় অযোধ্যা রায়ঃ মন্দির, মসজিদ নয়। আধুনিক বিজ্ঞান স্কুল এবং আধুনিক হাসপাতাল আর চিকিৎসা গবেষণাকেন্দ্রের প্রত্যাশা করেন বাংলাদেশের মুক্তমনা লেখক তসলিমা নাসরিন।
তিনি নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখছেনঃ
“আমি বিচারপতি হইলে অযোধ্যার রায়টা অন্যভাবে দিতাম। ২.৭৭ একর জমি যেইখানে রাম মন্দির বানানির অনুমতি দেওয়া হইছে সেইটা সরকারকে দিতাম আধুনিক একটা বিজ্ঞান স্কুল বানানির জন্য । আর যে ৫ একর জমি দেওয়া হবে মসজিদ বানানির জন্য, সেই ৫ একর জমিও আমি সরকারকে দিতাম একটা আধুনিক হাসপাতাল আর চিকিৎসা গবেষণাকেন্দ্র বানানির জন্য। আধুনিক বিজ্ঞান স্কুলে পুলাপানেরা ফ্রি পড়বে। আধুনিক হাসপাতালেও সবাই ফ্রি চিকিৎসা পাবে।”
ধর্মনিরপেক্ষ তসলিমা নাসরিন মানুষের জন্যে ভাবেন। দেশের জন্যে ভাবেন। সারা বিশ্বের জন্যে ভাবেন। তিনি আরো বলেন, “সরকারি হাস্পাতালে ভিড়, জায়গা পাওয়া যায় না। সরকারি ইস্কুলও ভালো নেই। প্রাইভেট গজাচ্ছে। মসজিদ মন্দির গির্জা মানুষের কি সত্যি কোনও উপকার করে?”
ধর্ম পালন করা সকলেই যে মন্দ মানসিকতার তা তিনি কখনোই বলেননি। তিনি বলেছেন,
“যারা ধর্ম পালন করে তাদের সকলে যে নিকৃষ্ট তা নয়, কিছু লোক ভালোও মিলবে। অন্যদিকে, ধর্ম পালন যারা করে না, তাদের সকলে যে ভালো তাও ঠিক নয়, কিছু লোক নিকৃষ্টও বটে।
এই সত্যটা মানুষ জোরে সোরেই বলুক এখন– ধর্ম মানুষকে কোনও অর্থেই নির্লোভ, শান্তি প্রিয়, দয়ালু, সৎ, নীতিবান মানুষ হওয়ার প্রেরণা দেয় না। ওইসব গুণের সংগে সম্পর্ক মুক্তচিন্তার,মানববাদের, আদর্শবাদের।”
অযোধ্যার ঐতিহাসিক রায় নিয়ে ইতিমধ্যেই বহু তারকা এবং বুদ্ধিজীবিরা নিজস্ব মতামত জানিয়েছেন।
বহু মানুষ লেখকের এমন মন্তব্যের বিরোধিতা করছেন। কারো কারো এমনও মন্তব্য শোনা যাচ্ছে, তাহলে কি তসলিমা সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে খুশি নন?
লেখক এই মন্তব্যেরও উপযুক্ত প্রত্যুত্তর দিয়েছেন, বলেনঃ “আমি বলি নি বিচার খরাপ হয়েছে বা দেশে ইস্কুল কলেজ হাস্পাতালের জন্য জায়গার অভাব হয়েছে। ওটা ব্যক্তিগত বিচার।”
সাহিত্যিক তসলিমারই সুরে প্রায় একই মত পোষণ করলেন বলিউড তারকা সলমন খানের বাবা তথা প্রখ্যাত চিত্রনাট্যকার সেলিম খান।
শনিবার সংবাদ মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘অযোধ্যা বিতর্ক নিয়ে আর কোনও আলোচনারই দরকার নেই। তার চেয়ে দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলির সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। আমাদের ভাল স্কুল ও হাসপাতালের প্রয়োজন। ওই পাঁচ একর জমিতে কলেজের নির্মাণ হোক। কারণ আমাদের মসজিদের প্রয়োজন নেই। নমাজ তো যেখানে খুশি পড়া যায়। ট্রেনে, বিমানে, মাটিতে, যে কোনও জায়গায় নমাজ পড়তে পারি আমরা। বরং ভাল স্কুলের প্রয়োজন আমাদের। দেশের ২২ কোটি মুসলামনের ভাল শিক্ষার প্রয়োজন। তাহলেই অনেক সমস্যা দূর হবে।’’

বিশ্বের যে কোন দেশেই ধর্ম নিয়ে বিতর্ক নয়, বর্তমানের সমস্যাগুলোকে ভেবে আগামি সুন্দর নিরপেক্ষ ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, শনিবার, অযোধ্যায় ৪৬০ বছরের পুরনো বাবরি মসজিদ মামলার রায়দান করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
২.৭৭ একর বিতর্কিত জমি রাম মন্দির গঠনের জন্য একটি ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
রায় পাঠ করে দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানিয়েছেন ৫ একর জমি অযোধ্যার অন্যত্র মসজিদ নির্মাণের জন্যে সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের হাতে তুলে দেওয়া হবে।