আমরা চির প্রচলিত নিয়মের বাঁধনে আবদ্ধ। হয়তো আত্মবিশ্বাসবলে একসময় কোন একজন পারে সেই বেড়া ডিঙিয়ে এগিয়ে যেতে। কাউকে না কাউকে পথপ্রদর্শক হতেই হবে।
এমনই এক পথপ্রদর্শকের সন্ধান পেলাম আমরা বাংলাদেশে। নারী-পুরুষের বৈষম্যে জর্জরিত দেশ। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কনের বাড়িতে আগে যান বর।
বাংলাদেশে ঘটল এর ব্যতিক্রম তথা সাধুবাদ জানানোর মতোই একটি সুন্দর ঘটনা।
বিয়ের কনে চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটি গ্রামের কামরুজ্জামানের মেয়ে খাদিজা আক্তার খুশি। তিনি কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজে স্নাতকের শিক্ষার্থী। হবু বর গাংনী উপজেলার চৌগাছার কমরেড আব্দুল মাবুদের ছেলে তরিকুল ইসলাম জয় একজন ব্যবসায়ী।
শনিবার দুপুরে কনে বরের বাড়িতে বিয়ে করতে আসেন। ৭টি মাইক্রোবাস ও ৩০টি মোটরসাইকেল বহর নিয়ে খুশি এসে নামেন বরের বাড়ির গেটের সামনে।
কনেকে দেখেই বরপক্ষ ফুল-মিষ্টি দিয়ে বরণ করে নেন।
একজন পুরুষ কনের বাড়িতে গিয়ে যেভাবে মেয়েকে বিয়ে করে থাকেন, ঠিক একই নিয়মে খুশি বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়েছেন। ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী একজন মাওলানা তাঁদের দু’জনকে কবুল পড়ান। প্রচলিত আইন অনুযায়ী স্থানীয় কাজি বিয়ের রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করান।
এরপর জাঁকজমকভাবে বড়পক্ষের নিমন্ত্রিত আত্মীয় স্বজন এবং কনে যাত্রীদের খাবারের আসরে বসানো হয়।
তবে বরের বাড়িতে এসে কনে বিয়ে করেছেন বলে বরের বাড়িতে প্রথমেই তাঁর বাড়িতে থেকে যাননি খুশি। বিয়ে করে বর জয়কে নিয়ে কনে যান তাঁর মায়ের বাড়িতে। সেখানে কয়েকদিন কাটানোর পর কনেকে সঙ্গে নিয়ে বর ফিরে আসবেন নিজের বাড়িতে।
খুশির বিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মনে খুশির জোয়ার এনেছে। কট্টরপন্থীরা আবার সমালোচনাও করছেন। তাতে কিছু যায় আসে না খুশির।
নিজের বিয়ের এমন আয়োজন সম্পর্কে খাদিজা আক্তার খুশি জানিয়েছেন, “নারী-পুরুষের সমান অধিকার হিসেবে একজন মেয়ে একজন ছেলেকে বিয়ে করত তাঁর বাড়িতে যেতে পারেন, তা কখনও বাস্তবায়ন হয়নি। সেই বাধার বৃত্ত ভেঙে আমরা শুরু করেছি। আশা করছি আরও অনেকেই এখন এটি করবেন।”
বর তরিকুল ইসলামও পূর্ণ মর্যাদাসহকারে এই বিয়ে করেছেন। তিনি মনে করেন, তাঁদের এই বিয়ের মাধ্যমে সমাজে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। তাঁরা চেয়েছেন বিয়ের একটি নতুন ধারা তৈরি করতে। এতে সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য একটু হলেও কমবে।
খুশি ও তরিকুলের মতোই বাংলাদেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে আসুক। নারী-পুরুষের চিরদিনের বৈষম্য দূর হোক।