ঢাকা: বৈশ্বিক করোনার থেকেও বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখন ডেঙ্গু (dengue) আতঙ্কই বেশি। কেননা ডেঙ্গুর (dengue) থাবা বেশ জোরালোভাবে পেয়ে বসেছে। বাংলাদেশে মারণঘাতী ডেঙ্গুর (dengue) পাশাপাশি করোনা পিছিয়ে নেই।
দু মারণঘাতী হাত ধরাধরি করে হাটছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। শুধু বৃহস্পতিবারই বাংলাদেশে ডেঙ্গিতে (dengue) ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা চলতি বছরে একদিনে সর্বোচ্চ।
এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল। নতুন ৮ জনকে নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গিতে (dengue) মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৩ জনে। বৃহস্পতিবার আরও ৭৬৫ জন ডেঙ্গি (dengue) আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সবমিলিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গি (dengue) রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৯৫ জনে।
বৃহস্পতিবার সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেঙ্গিতে (dengue) আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ৪৯৭ জন ঢাকার বাসিন্দা। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬৮ জন।
সবমিলিয়ে বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন এক হাজার ৯১৫ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন ৭৮০ জন।
এতে আরও বলা হয়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ডেঙ্গিতে (dengue) আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩ হাজার ২৮২ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২০ হাজার ৫০৪ জন।
গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর সিটি করপোরেশনকে ডেঙ্গু ভাইরাসের বড় ধরনের প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা পরামর্শ দেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে করপোরেশনকে অবিলম্বে ব্যাপক ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে শরতের শেষ সময়েও ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে। ভাইরাসটির রেকর্ড ভাঙার দৌড়ে প্রতিদিনই নতুন রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হচ্ছে।
হাসপাতাল গুলোতে আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করেও চাপ সামলানো যাচ্ছে না। চিকিৎসকরা বলছেন, এবার আক্রান্তদের অবস্থা দ্রুতই খারাপ হচ্ছে। কীটতত্ত্ববিদদের দাবি মশা দমনে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারে সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।
মশার হটস্পট ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হচ্ছে না। লার্ভা নিধনে নামকাওয়াস্ত সার্ভিলেন্স এবং প্রচার চালিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি করপোরেশন। বাস্তবে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ দেশবাসী।
এদিকে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে ডেঙ্গুতে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
দেশে এ পর্যন্ত এটাই এক বছরে সর্বোচ্চ ভর্তি রোগী। সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের। ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, মৃত্যু হয় ২৬ জনের।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে সংক্রমণ তেমন দেখা না গেলেও ২০২১ সালে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জন মারা যান।
এবার পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী ৩০ থেকে ৪০ হাজার পেরিয়ে যেতে পারে।চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে জানুয়ারিতে দুজন ভর্তি হলেও অক্টোবরের প্রথম বারো দিনে ১১৯ শিশু ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বছর সব বয়সিরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও প্রায় ২৫ শতাংশই শিশু।