ঢাকা: বাংলাদেশে (bangladesh) রোহিঙ্গা (rohingya) ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা (rohingya) সন্ত্রাসীরা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে সংঘর্ষ ও খুনোখুনির ঘটনা। উখিয়া রোহিঙ্গা (rohingya) ক্যাম্পে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটছে।
গত দু’দিনে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে রোহিঙ্গা (rohingya) সন্ত্রাসীরা। সবশেষ বৃহস্পতিবার ভোরে উখিয়ার (ukhiya) কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোহাম্মদ এরশাদ নামের এক রোহিঙ্গা তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
শরণার্থী শিবিরগুলোতে একের পর এক হামলা ও খুন চালিয়ে বিদ্রোহী রোহিঙ্গা (rohingya) গ্রুপগুলো সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করছে। গত জুলাই থেকে রোহিঙ্গা (rohingya) শিবিরে তিন মাঝিসহ অন্তত ১১ জন খুন হয়েছেন।
এদের মধ্য পাঁচজন ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক। রোহিঙ্গা (rohingya) সন্ত্রাসীরা ইয়াবা পাচার, অপহরণ ও ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। এমনকি মুক্তিপণ আদায়ে ব্যর্থ হলে খুনও করতেও দ্বিধা করছে না তারা। দিন যতই যাচ্ছে ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছেন এইসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।
বাংলাদেশ পর্যটন নগরী কক্সবাজার মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই ফের কক্সবাজার জেলার উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে এরশাদ নামে এক রোহিঙ্গাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।
নিহত এরশাদ এক্সটেনশন ক্যাম্প-৪ এইচ ব্লকের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার ভোরে কুতুপালং ক্যাম্পে এ কাণ্ড ঘটে। ১৪-এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আনোয়ার জানান, ক্যাম্পে এরশাদ নামে এক রোহিঙ্গাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এই হত্যার কারণ খোঁজা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এর আগে গত বুধবার কক্সবাজারের উখিয়া শরনার্থীশিবিরে পাহারায় নিয়োজিত এক রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) গোষ্ঠীর সদস্যরা।
গত মঙ্গলবার দিবাগত গভীররাতে উখিয়ার বালুখালী ১৮ নাম্বার ক্যাম্পে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত মো. জাফার (৩৫) ওই ক্যাম্পের ভলেন্টিয়ারের দায়িত্বে ছিলেন। এপিবিএন সহকারী পুলিশ সুপার (অপস্) মো.ফারুক আহমেদ জানান, দুস্কৃতিদের একটি দল ক্যাম্প-১৮ এর এইচ/৫১ ব্লকে প্রবেশ করে পাহারারত ভলান্টিয়ারদের উপর আক্রমণ করে এবং ১/২ রাউন্ড গুলি করে।
পরে তারা ভলান্টিয়ার মো. জাফরকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় আরও কয়েকজন আহত হয়। তার ধারণা, হামলাকারীরা আরসা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি গোষ্ঠীর সদস্য। এ ঘটনায় ক্যাম্পে প্রবেশে জোরদার চেকপোস্ট, সার্বক্ষণিক টহল ও ব্লক-রেইড এর মাধ্যমে ক্যাম্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দেশটির সেনাবাহিনীর নির্বিচারে চালানো হত্যা, অগ্নিসংযোগ লুটপাট থেকে বাঁচতে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা।
এর আগে থেকে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া চার লাখ রোহিঙ্গাসহ মোট শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ লাখের বেশি।এ কয়বছরে দেড় লাখ রোহিঙ্গা জন্ম নিয়েছে। এতে করে উখিয়ার কুতুপালং পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কিছুলোক ভয়ংকর। তারা অহরহ গত্যা, তরুণী-যুবতী পাচারসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত। যে শুধু রোহিঙ্গা নয়, স্থানীয়রাও হুমকির মুখে পড়েছেন।
বিভিন্ন সংস্থা ও স্থানীয় তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২০টির বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পুরো এলাকাজুড়ে মাদকের ডিপো আর খুন-খারাবি করছে। অপহরণ করে রোহিঙ্গাদের মুক্তিপণ আদায় এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
রোহিঙ্গারা স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরবাড়িতে চুরি-ডাকাতি করছে। কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির নেতা অ্যাডভোকেট তাপস রক্ষিত জানান, সীমান্তবর্তী উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা রোহিঙ্গাদের কারণে এখন রীতিমতো ঝুঁকির মুখে বসবাস করছে।
শিবিরগুলো এখন স্থানীয় লোকজনের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।
ক্যাম্পে কর্মরত কর্মকর্তারা জানিয়েছে, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে বছরে ৩০ হাজার ৪০০ শিশু জন্মগ্রহণ করছে।
সে হিসেবে গেল পাঁচ বছরে প্রায় দুই লাখ শিশু রোহিঙ্গা শিবিরে জন্মগ্রহণ করেছে। যদি রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন করা না যায়, তাহলে বাংলাদেশ তথা পর্যটন নগরী কক্সবাজার মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
শরণার্থী শিবিরগুলোতে একের পর এক হামলা ও খুন চালিয়ে বিদ্রোহী রোহিঙ্গা গ্রুপগুলো সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করছে। গত জুলাই থেকে রোহিঙ্গা শিবিরে তিন মাঝিসহ অন্তত ১১ জন খুন হয়েছেন। এদের মধ্য পাঁচজন ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা পরিচয় আড়াল করে অনেকেই বিদেশে চম্পট দেয়ার চেষ্টা করছেন। এ জন্য তারা ভুয়া আইডি কার্ড, ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি, ভুয়া নাগরিকত্ব সনদ তৈরি করছে।
বাংলাদেশের এক শ্রেণির দালালও তাদের এ অপকর্মে সহায়তা করছে। সবমিলিয়ে রোহিঙ্গারা এখন দেশের নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্যমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাস্টার মুন্না গ্রুপ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ত্রাস ডাকাত হাকিম গ্রুপ, জাবু গ্রুপ, ইসলাম গ্রুপসহ ২০টি থেকে ৩০টি ছোট-বড় সন্ত্রাসী গ্রুপ সম্প্রতি নবী গ্রুপের সঙ্গে জোট বেঁধেছে।
নবীর দিকনির্দেশনায় গ্রুপগুলো এখন কাজ করছে। তাদের হাতে বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি অস্ত্র রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মতে, এ মুহূর্তে শুধু নবী গ্রুপের কাছেই অর্ধশতাধিক ভারী অস্ত্র রয়েছে।
অস্ত্রগুলোর অধিকাংশই এম-১৬ ও একে-৪৭। সম্প্রতি ক্যাম্প থেকে পাঁচ শতাধিক গুলিসহ মার্কিন তৈরি এম-১৬টি উদ্ধার করা হয়। এগুলো নবীর গ্রুপের কাছে যাচ্ছিল।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নবী সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই। তাই তাকে অনেকে ছোটখাটো সন্ত্রাসী মনে করেন। কিন্তু নবী পুরো বাংলাদেশের জন্য হুমকি। এর আগে নবীকে দেশের জন্য হুমকি উল্লেখ করে তাকে ধরিয়ে দিতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
তবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের একটা দ্বীপে নবী বসবাস করায় তাকে ধরা যাচ্ছে না।অভিযোগ-মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নবীর সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নবীকে পরিচালনা করছে। নবীসহ সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে মদদ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসাবে তুলে ধরতে এবং প্রত্যাবাসন ঠেকিয়ে রাখতে চাইচ্ছে।
১৪ এপিবিএন-এর সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন) মো. ফারুক আহমেদ জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীদের পাহারার ফলে ক্যাম্পে আগের তুলনায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। ফলে এসব গ্রুপ এখন নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ করতে চাচ্ছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অকার্যকর করার চেষ্টা করছে। শিবিরগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ করতে এসব ক্যাম্পভিত্তিক সন্ত্রাসী দল নিরাপত্তাকর্মীদের টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছে। এরা প্রতিনিয়ত অবস্থান ও কৌশল বদল করে কার্যক্রম চালায়। কিন্তু তাদের টার্গেট কোনোভাবে সফল হবে না। আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি।