ঢাকা: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের (corona ) প্রকোপ কমতে না কমতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্ব এখন টালমাটাল অবস্থায়। ধনী-গরিব সব দেশই পড়েছে বিপাকে।
বাংলাদেশের (bangladesh) অর্থনীতিও ধাক্কা খেয়েছে। যুদ্ধের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের সাপ¬াই চেইন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এই বিপত্তি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে বটে, তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে।
এ জন্য করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ উঠে এসেছে তাদের বক্তব্যে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে বাংলাদেশকে (bangladesh)। আর হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচার ঠেকাতে হবে।
তবে দেশের ( ভেতরে সবচেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে। ভর্তুকি দিয়ে হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে তা। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলছেন, বিশ্বব্যাপী এই অস্থিরতার কারণে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত। নিজেদের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। এতে চাপ কমবে।
যুদ্ধরত ইউক্রেন ও রাশিয়া দুই দেশই খাদ্যশস্যের বড় রফতানিকারক। যুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে খাদ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী এর দাম বেড়েছে। দেশ দুটি থেকে বিশ্বের মোট গমের ২৫ শতাংশ চাহিদা মেটানো হয়।
সানফ্লাওয়ার বীজ এবং তেলেরও অর্ধেক এই দুটি দেশে উৎপাদিত হয়। ইউক্রেন সারা বিশ্বে অনেক ভুট্টাও রফতানি করে।
অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শেষ হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। দেশ দুটি বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েক ধরনের খাদ্যের বড় জোগনাদাতা।
এখানে আমদানি-রফতানি ব্যাহত হওয়ায় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের বাজারেও রাশিয়ার ব্যাপক আধিপত্য। এখানেও ব্যাঘাত ঘটায় বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে। ফলে আমাদের দেশেও সরকার দাম বাড়িয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে আমি বলব, ভর্তুকি দিয়ে হলেও জ্বালানি তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কেননা এর প্রভাব পড়ে সবকিছুর ওপর। উৎপাদন, পণ্য পরিবহন, গণপরিবহন সবকিছুতে। এছাড়া আমাদের রফতানিতে মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের হুন্ডির মাধ্যমে ডলার পাচার ঠেকাতে হবে। অর্থপাচার ঠেকাতে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।
নিরাপত্তা বিশে¬ষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের সাপ্লাই চেইন নষ্ট হয়ে গেছে। দেশ দুটি বিশ্বের মোট চাহিদার ২৫ শতাংশ গম রফতানি করে।
এছাড়া ভোজ্যতেলের বড় উৎস দেশ দুটি। এই পণ্যগুলোর সরবরাহ ব্যাঘাত ঘটায় বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলো কিছুটা বিপাকে পড়ে গেছে। অন্য উৎস থেকে কিছু আমদানি করে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। রাশিয়া বিশ্বের তেল-গ্যাস রফতানি করা দেশগুলোর অন্যতম একটি।
দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, এতে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ বা যাদের আর্থিক সক্ষমতা কম, তারা বিপদে পড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বরাদ্দ বাজেট থেকে বেশি খরচ হচ্ছে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব বাংলাদেশে কেমন পড়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় খরচ বাঁচাতে লোডশেডিং দিচ্ছে সরকার। কারখানায় উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটেছে।
ট্রান্সপোর্টেশন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সব জিনিসের ওপর প্রভাব পড়েছে। এছাড়া গম-ভুট্টা আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটায় এসব সম্পর্কিত সব পণ্যের দাম বেড়েছে। তাছাড়া ভোজ্যতেলেও একটা প্রভাব পড়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় যে দেশগুলোর সক্ষমতা আছে সেগুলো টিকতে পারছে। আবার শ্রীলঙ্কার মতো দেশ টিকতে পারেনি। আফ্রিকার কিছু দেশের অবস্থাও খারাপ। স্বভাবতই সাপ¬াই চেইন ও বাণিজ্য নষ্ট হওয়ার কারণে আমাদের জনগণও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এবং সমঝোতায় না আসা পর্যন্ত সমাধান হওয়া কঠিন।বর্তমান প্রক্ষাপটে সমাধান বা করণীয় কী-এমন প্রশ্নে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, দাম তো বিশ্ববাজারে বেড়েই আছে। এখন এই নিত্যপণ্যগুলো পাওয়ার জন্য বিকল্প মাধ্যম খুঁজতে হবে।
যাদের কাছে আছে তাদের থেকে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক কিছু বিষয় আছে। সেগুলো মাথায় নিয়ে এগুতে হবে। গমের ক্ষেত্রে আমরা প্রতিবেশী ভারত থেকে আমদানি করতে পারি। জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে এখন জিটুজি চুক্তি উত্তম করণীয় বলে মনে করেন তিনি।
অর্থাৎ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সাথে সরাসরি চুক্তি। সেক্ষেত্রে সরকারিভাবে তেল পাওয়ার নিশ্চয়তা পেতে হবে। তাহলে স্পট মার্কেট যে লাফালাফি করছে, সেটা বন্ধ হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক বিষয়গুলো মাথায় রাখার পরামর্শ দেন এই বিশে¬ষক।
তিনি আরো বলেন, ভোজ্যতেলের সমস্যাটা এখন তেমন একটা নেই। তবু এক্ষেত্রে নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানো একটি বড় পদক্ষেপ। এছাড়া যেসব দেশ এটা উৎপাদন করে সেখান থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বিশ্বব্যাপী এই অস্থিরতার কারণে পরোক্ষভাবে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা নিজেদের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। আমাদের রিজার্ভে কোনো সমস্যা নেই। এরপরেও আমি মনে করি এখানে নজরদারি বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানো শ্রমিকদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আমাদের মূল আয় তো আসে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের মাধ্যমে।
এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সমস্যা দেখতে হবে। তাদের প্রতি আমাদের আরো যত্নবান হতে হবে। রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ কত দিন চলবে তা আমরা বলতে পারি না। তবে তাড়াতাড়ি সেটা শেষ হোক এটা আমাদের কাম্য। আমাদের অপেক্ষা করে লাভ নাই। ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকা। কৃষি অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এটা ঠিক থাকলে ভয় নেই।