অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের দাবিতে ঢাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত । রাম মন্দির নয়, বাবরি মসজিদের দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশ।
অযোধ্যায় ৪৬০ বছরের পুরনো বাবরি মসজিদ মামলার রায়ের প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।
শনিবার মাগরিবের নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সংগঠনটির কয়েকশ’ নেতা-কর্মী বিক্ষোভে অংশ নেন।
বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এম. হাছিবুল ইসলাম বলেন, বাবরি মসজিদ নিয়ে ভারতসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মুসলমানরা একটি মীমাংসার রায়ের প্রত্যাশায় ছিল।
কিন্তু ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট যে রায় ঘোষণা করেছেন, সে রিপোর্টে বাবরি মসজিদের নিচে একটি স্থাপনা ছিল বলে উল্লেখ রয়েছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের একটি অস্বচ্ছ রিপোর্টের আলোকে একটি সুপ্রিমকোর্ট রায় দিলে সেই সুপ্রিমকোর্টের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলে চলেন, ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টকে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বাবরি মসজিদের যায়গা বাবরি মসজিদের জন্যই বহাল রাখতে হবে। বিক্ষোভপূর্ব সমাবেশে বক্তারা ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টকে বিতর্কিত ও অনৈতিক এই রায় বাতিল করে ওই জায়গায় বাবরি মসজিদের জন্য বরাদ্দ দিতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবি জানান।
এদিকে মুসলিম বিশ্ব এ রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতের বাবরি মসজিদ মামলা বা অযোধ্যা মামলা নিয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে তা চরম পক্ষপাতমূলক। মূলত ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকারকে খুশি করতে এ রায় প্রদান করেছে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট।
রবিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির, দারুল উলূম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী বাবরি মসজিদের বিতর্কিত রায় প্রসঙ্গে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে একথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৫২৮ সালে মোঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি কর্তৃক তৈরি করা হয় বাবরি মসজিদ। ওই স্থানে কথিত ও কল্পিত রাম মন্দির থাকার অজুহাতে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উগ্রবাদী হিন্দু কর্তৃক বাবরি মসজিদ শহীদ করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে শত শত মুসলমানকে শহীদ করা হয়। মুসলিম বিশ্ব সে ক্ষত এখনো ভুলেনি।
হেফাজত আমির বলেন, বাবরি মসজিদের বিতর্কিত মামলার পক্ষপাতমূলক রায় এমন সময় দেয়া হলো, যখন ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠি হিন্দুদের হাতে চরমভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। গোমাংস ভক্ষণ ও জয়শ্রীরাম না বলায় পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। আমি মনে করি, এ রায়ে হিন্দুদের খুশি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কট্টর হিন্দুদের উগ্রতা আরও বেড়ে যাবে।
আল্লামা আহমদ শফী আরও বলেন, প্রত্নতত্ত্ববিদগণের বহুবার অনুসন্ধানের পরও সেখানে কোনো মন্দিরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপরও বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির স্থাপনের অযৌক্তিক রায় দেয়া হয়েছে। আমাদের আশঙ্কা এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চরম অবনতি হবে। এহেন মুহূর্তে মুসলিম বিশ্বের বাবরি মসজিদ ইস্যুতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা এবং ভারতীয় মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ।
ভারতের বৈচিত্রের মাঝে ঐক্যের দেশ। সাম্প্রাদায়িক সংঘর্ষের দেশ নয়। এছাড়া ভারত-বাংলাদেশের মাঝে সম্পর্ক যথেষ্ট উন্নত। বাংলাদেশের সংগঠনগুলোর এই উগ্র আচরণে তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছে জনসাধারণ।