চট্টগ্রামের বিপ্লবতীর্থ নামে পরিচিত পটিয়ার ধলঘাটে গত শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজের পরে ‘সর্বস্তরের মুসলিম তৌহিদী জনতা’ র ব্যানারে একদল মুসলিম প্রায় অর্ধশতবর্ষ প্রাচীন একটি সার্বজনীন দুর্গামন্দিরে ব্যাপক হামলা ও সরস্বতী প্রতিমা ভাংচুর করেছে। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আতংক ও নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে। এই মিছিলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনগন। মিছিল থেকে ‘ একটা দুইটা হিন্দু ধর, হিন্দু ধইরা সকাল-বিকেল নাস্তা কর, নরেন্দ্র মোদীর দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’ এ ধরনের কটুাক্তমুলক শ্লোগানও শোনা যায়।
এ ঘটনায় মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে থানায় মামলা করার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে নন্দেরখীল গ্রামের আবুল কাসেমের ছেলে মো: ফরিদ(২৫) ও আবদুর রহিমের পুত্র মো: মানিক (২৬) নামে দুইজনকে আটক করেছে। গত শনিবার তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এরা দু’জন সরকারিদল আওয়ামীলীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ছত্রচ্ছায়ায় রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ভারতের দিল্লীতে সম্প্রতি সংঘটিত সহিংসতা এবং মুজিববর্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের পটিয়ায় ধলঘাট ক্যাম্প সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে ‘সর্বস্তরের মুসলিম তৌহিদী জনতা’ র ব্যানারে এই বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই মিছিল থেকেই দুর্গামন্দিরে ও সরস্বতি পুজার প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে।
গত প্রায় ৫০ বছর ধরে এই দুর্গামন্দিরটিতে পুজা হচ্ছে। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রবোধ রায় চন্দন বাদী হয়ে পটিয়া থানায় ৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর আগে গত শুক্রবার বিকেল তিনটায় উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের ধলঘাট ক্যাম্প এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনা জেনে গতকাল শনিবার সকালে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খিস্ট্রান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি দোষী ব্যাক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ এলাকায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সবার প্রতি আহŸান জানিয়ে ভবিষ্যতে যাতে কোন ধরনের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বা আর কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রশাসনসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অসা¤্রদায়িক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহŸান জানান।
এদিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। অবশ্য এই হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের হালিশহওে অবস্থিত আবহনী ক্লাবের মাধ্যমে জুয়ার আসর বসিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকাওে তাকে বিদেশে যেতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বিক্ষোভ মিছিলে বিক্ষুব্ধরা রুশ-ভারতের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান, ভারতে মুসলিম নির্যাতনের বিচার চাই, মোদির বাংলাদেশ সফর মানিনা, মানিনা এ ধরনের শ্লোগান দেন।
তবে পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো: বোরহান উদ্দিন দাবি করেন , ভারতের দাঙ্গার ইস্যু ও নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের প্রচার করা হলেও প্রকৃত পক্ষে জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। পটিয়ায় অনেক মাদরাসা থাকলেও কেউ এ ধরনের কর্মসূচি দেয়নি। ধলঘাটের ওই এলাকায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে মহল বিশেষ তৌহিদী জনতার ব্যানারে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। আমরা দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছি। এছাড়া ও আরো যারা জড়িত তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।