আজ ২১ শে আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মর্মান্তিক দিন। ২০০৪ সালের আজকের দিনেই ঢাকায় আওয়ামি লিগের এক জনসভায় জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হয়। গুরুতর আহতদের মধ্যে ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তথা তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা।
দফায়-দফায় বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। আতংকে কাঁপতে থাকে মানুষজন।
আওয়ামি লিগের প্রেসিডিয়ামের তৎকালিন সদস্য আমির হেসেন আমু। আমু বলেন, “নেত্রীর বক্তব্য শেষ হবার সাথে সাথে হঠাৎ করে বিকট শব্দ শুনলাম। প্রথমে আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, এদিক-ওদিক তাকালাম। তখন চারপাশে চিৎকার শুনতে পেলাম।”
যখন গ্রেনেড হামলা শুরু হলো, তখন মঞ্চে বসা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা শেখ হাসিনার চারপাশে ঘিরে মানব ঢাল তৈরি করেন – যাতে তাঁর গায়ে কোন আঘাত না লাগে। যেসব নেতা শেখ হাসিনাকে ঘিরে মানব ঢাল তৈরি করেছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। তখন হানিফের মাথায় গ্রেনেডের আঘাত লেগেছিল। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের শেষের দিকে তিনি মারা যান।
গ্রেনেড হামলার পর শেখ হাসিনা বলেন, নেতা-কর্মীরা জীবন দিয়ে তাঁর জীবন রক্ষা করেছিলেন। কান্না জড়িত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার নেতা-কর্মীরা সবাই আমাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিল যে অনেকেই ইনজিউরড (আহত) হয়েছে। তাদের রক্ত এখনও আমার কাপড়ে লেগে আছে। আমার নেতা-কর্মীরা তাদের জীবন দিয়েই আমাকে বাঁচিয়েছে।”
২৪ জন আহতদের মধ্যে এখনো অনেকে শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিনটার নিয়ে বেঁচে আছেন অতি কষ্টে। কেউ কেউ জানিউয়েছেন, ব্যথায় শরীর মাঝে মাঝে ছিঁড়ে যায়! এদের একজন নাসিমা ফেরেদৗসি। তাঁর শরীরে এখনও দেড় হাজারের মতো গ্রেনেডের স্প্লিনটার রয়েছে। শরীরের ভেতর এসব স্প্লিনটার নিয়ে যন্ত্রণা-কাতর জীবন পার করছেন নাসিমা ফেরদৌসি।
শেখ হাসিনা বলেন, আহতদের সাহায্য করতে এগিয়ে না এসে পুলিশ যখন উল্টো টিয়ার গ্যাস, লাঠিচার্জ ও গ্রেফতার করতে শুরু করলো, তখন বুঝতে পারা যায় যে এ ঘটনা তাদের সাহায্যেই হয়েছে। এই মামলার বিচার কাজ এখনও নিম্ন আদালতে চলছে।
২১ শে আগস্টের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন সাধন করে। দুই প্রধান দল আওয়ামি লিগ-বিএনপি’র মধ্যে সম্পর্ক আরো তিক্ত হয়।
আওয়ামি লিগের কর্মীদের অনেকেই মনে করেন, সেদিনের গ্রেনেড হামলা হয়েছিল দলের নেত্রীকে হত্যার জন্যেই এই ছক কষা হয়েছিল।
২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২১ শে আগস্টের ঘটনার ফের তদন্ত হয়।
সেখানে নিষিদ্ধ সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান এবং তৎকালীন বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর নাম আসে।
২০০৯ সালে আওয়ামি লিগে ক্ষমতায় আসার পর তদন্ত শুরু হয় পুনরায়।সে তদন্তে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপি’র অন্যতম শীর্ষ নেতা তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সহ বেশ কয়েকজন পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা এবং পুলিশের সাবেক তিনজন মহাপরিদর্শক বা আইজিপি’র নাম উঠে আসে।
সংগৃহীতঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন