হিন্দুস্তান পেপার করপোরেশনের অধীন কাছাড় পেপার মিল এবং জাগিরোড পেপার মিল দুটি চার বছর থেকে লকআউট। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাকলগ্নে নির্বাচনী ভাষণে বলা হয়েছিলে শাসনক্ষমতায় আসলে কাগজকল দুটি খুলে দেওয়া হবে। একইসুরে সুর মিলিয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। একবার নয়, বহুবার রাজ্য সফরে এসে উদ্ধত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলে ছিলেন বিজেপি ক্ষমতায় এলে ‘ধোঁয়া নিকালকে দিখায়েঙ্গে‘। আর সে বছরই কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি।
২০১৬ সালে অসমেও বিপুল জনসমর্থন নিয়ে সরকার গড়ে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি। যদিও পরবর্তীতে কথা রেখেছেন মোদীজী ও সর্বানন্দ সোনোয়াল । ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তবে বুঝতে ভুল করেছিলেন পাঁচগ্ৰাম কাগজ কলের কর্মীরা অনেকেই। তাঁরা ভেবেছিলেন, কারখানার চিমনি থেকে ধোঁয়া বেরোবে। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোটাই ঘটলো।
কাগজকলের হাজার হাজার কর্মচারীরা বেতনহীন ভাবে অভুক্ত অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় দিন যাপন করছেন। অসমে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিশ্ব বিনিয়োগ সন্মেলন অনুষ্ঠিত হল। কিন্তু রাজ্যের বৃহৎ শিল্পোদ্যোগ দুটি খোলার ব্যবস্থা করেনি,বরং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ২ লক্ষ শ্রমজীবি কর্মজীবি সহ তাদের পরিবারবর্গকে অন্ধকারের দিকে একরকম জোর করে ঠেলে দেওয়া হয়।
শিলচরের বিজেপি সাংসদ ড. রাজদীপ রায় লোকসভায় পেপার মিল দুটির কর্মহীন শ্রমিকদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে জানিয়েছিলেন, বিনা বেতনে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন ৫০ জনেরও বেশি লোক। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন লাখো। এই পরিস্থিতিতে শীঘ্রই কাগজকল দুটি খোলার ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকারের কাছে জোরাল দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মন গলেনি। এহেন পরিস্থিতিতে রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকার শ্রমিকদের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে বলে সরাসরি অভিযোগ করল পেপার মিল দুটির সংগঠন জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি অব রেকগনাইজ ইউনিয়নের নেতারা।
ক্যাজুয়াল কর্মী রয়েছে আরও সহস্রাধিক। তাদের উপার্জন বন্ধ ৩৮ মাস থেকে। অথচ কিছুদিন আগেই কোটি কোটি টাকা উড়িয়ে সম্পন্ন হয়েছে নমামি বরাক নদী উৎসব। সেটি কীভাবে সম্পন্ন হলো? এর আগে হয়েছে নমামি ব্রহ্মপুত্র। সেখানেও কোটি কোটি টাকা উড়েছে।এইচপিসির জনৈক কর্মী অশ্রুসিক্ত নয়নে জানান বিজেপি সরকার কেন্দ্রে ও রাজ্যে ক্ষমতা দখলের প্রাকলগ্নে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কাছাড় পেপার মিল আবার চালু করবে । দেওয়া হবে ওদের বকেয়া পাওনা কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে অসমের মুখ্যমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী সব জেনেশুনেও এইচপিসি চালু করা তো দূরের কথা ওদের বকেয়া পাওনা দেওয়ার তদ্ধির পর্যন্ত করেননি ।
পাশাপাশি রাজ্যের শাসক দলের নেতামন্ত্রীরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন এইসব পরিবারের কথা? সম্প্রতি গুয়াহাটি প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মানবেন্দ্র চক্রবর্তী, রামলাল ডেকা, নজিমুল ইসলাম, উদ্ধব দাস প্রমুখ এই অভিযোগ করে অসমকে আর্থিকভাবে, কর্মসংস্থান, শিল্প বিনিয়োগে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
তোপ দেগে ওইদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে নেতারা বলেন অধিকাংশ কর্মী ও তাদের পরিবার পরিজনকে অনাহার,অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ পর্যন্ত চালাতে পারছেন না কর্মীরা। কাগজ কলের কর্মীরা ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্ৰচণ্ড দুশ্চিন্তায় কাগজকল দুটোর বিভিন্ন কর্মীসংস্থা সংগঠন ।
চরম অর্থাভাবের মুখে পড়েই বিশ্বজিৎ দাস আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন । এক ইউনিয়ন নেতা বলেন, এইচপিসি-র অধীন কেরালার কুট্টায়ামে একটি বন্ধ পেপার মিল কেরালা সরকার আগাম ২৫ কোটি টাকা দিয়ে অধিগ্রহণ করেছে, বাকি টাকা এইচপিসি দিতে রাজি হয়েছে, গত ২৫ নভেম্বর অধিগ্রহণের কথা জানিয়েছে।
অথচ অসমের দুটি পেপার মিলের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি জলের দামে বিক্রি করে দিতে চাইছে সরকার।কাগজকলের কর্মীরা মাত্র কুড়ি কোটি টাকা ধার চেয়েছিলেন বিজেপি সরকারের কাছে, কয়েকমাসের মাইনের জন্য।
বেঁচে থাকতে হবে তো। কিন্তু তাতেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সরকার।
এই পরিস্থিতে রাজ্যের বৃহৎ শিল্পদ্যোগ দুটি বাঁচাতে হলে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বলে মনে করেন ইউনিয়ন নেতারা।