দেশভাগের যন্ত্রণা বাঙালিকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলছে। বেদনা, দাঙ্গা এবং শারীরিক ও মানসিক কষ্ট কখনও লাঘব হয়নি বাঙালির। ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর অসমে মৃত্যুর মিছিল লেগেছিল। যার রেশ এখনো কিছুমাত্র কেটে যায়নি। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়ে মানুষের কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে। দিন এনে দিন খাওয়া লোকজনেরা নিজের ও পরিবারের পেটে দু-বেলা দু-মুঠো অন্ন তুলে দেয়ার চিন্তা করবে নাকি নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করার লাইনে হত্তে দেবে?
এবার এনআরসি নিয়ে ফের মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন সারা ভারতসহ ফের অসমে এনআরসি হতে চলেছে।
পাশাপাশি সংসদে এও আশ্বাস দিয়েছেন, ধর্মনিরপেক্ষভাবে ভারতের প্রত্যেক নাগরিক সে তালিকায় স্থান পাবেন।
রাজ্যসভায় এদিন অমিত শাহ বলেন, “এনআরসি-তে ধর্মের নিরিখে বাদ দেবার কোনও বিধিই নেই। ভারতের নাগরিকরা সকলেই ধর্ম নির্বিশেষে এনআরসি তালিকায় স্থান পাবেন। এনআরসি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল থেকে আলাদা।”
জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের সদস্য সুস্মিতা দেব বিজেপির এই নকশাকে তীব্র ভাষায় বিরোধিতা করে জনগণের মঙ্গলকামনা করেছেন।
তিনি ট্যুইট করে জানান, “এনআরসি বিজেপির রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। অসমের তিন কোটিরও বেশি লোক, যাঁদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল তাঁদের ফের সমস্ত কাগজপত্র দেখাতে হবে এবং অসম এনআরসি থেকে বাদ পড়া প্রকৃত নাগরিকদের কোনও নিশ্চয়তা নেই যে নতুন এনআরসি তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করবে, বা নিশ্চিত করবে। শুভকামনা রইল সকল মানুষের জন্যে…”
অসমে এনআরসি প্রক্রিয়া লাগু হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। অমিত শাহ বলেন, সারা ভারতে এবার এনআরসি প্রক্রিয়া লাগু হবে, তার মধ্যে বাদ যাবে না অসমও।
৩১ আগস্ট প্রকাশিত ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অসমের চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) থেকে বাদ পড়েছেন প্রায় ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ।
চূড়ান্ত তালিকায় মোট আবেদনকারীদের মধ্যে ৩ কোটি ৩০ লাখের মধ্যে নাগরিক হিসেবে স্থান পেয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জন।
অমিত শাহ এদিন সংসদে বলেন, ‘‘তালিকায় নাম বাদ গেলে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে যাওয়ার অধিকার রয়েছে প্রত্যেকের। অসমের বিভিন্ন প্রান্তে এই ট্রাইবুনাল গড়ে তোলা হবে। কারও সামর্থ্য না থাকলে, অসম সরকার তাঁর আইনজীবীর খরচ বহন করবে।’’
অসমের জনগণের মধ্যে ফের হতাশার সৃষ্টি হয়েছে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ঘোষণায়। সর্বোপরি মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কাগজপত্র নিয়ে। দীর্ঘ প্রক্রিয়া, এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গিয়ে দিনরাত নাজেহাল হয়ে নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করার জন্যে সরকার রীতিমতো মানুষের জীবনের সঙ্গে খেলা করছে।
জনগণ জানাচ্ছে, আইনজীবির খরচ বহন করলেই তো সব সমাধান হয়ে যায় না। আতংকে নীল হচ্ছে রাজ্যবাসী ফের!
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমর্থনে মুখ খোলেন অমিত শাহ এদিন। তিনি বলেন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে যেসব হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রিষ্টান, পারসি ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। ক্যাব তথা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রয়োজনীয়তা এখানেই।
বিগত ৮ জানুয়ারি লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৬ পাশ হয়। ওই বিলে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশি দেশ থেকে আসা অমুসলিম নাগরিকদের নাগরিকত্ব প্রদানে সুবিধা দেবার কথা বলা হয়েছে।