প্রবল উৎকণ্ঠা ও প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শনিবার ৩১ আগস্ট প্রকাশ করা হয় বহু চর্চিত নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি। তবে এখানেই শেষ নয় তালিকায় যাঁদের ঠাই হয়নি তাঁরা যেতে পারবেন ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে। বাদ পড়া দরিদ্র মানুষের আইনি সহায়তা করবে সরকার। আরও কত কিছু!
শনিবার এই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের প্রাকমুহূর্তে দেখা গেল বদরপুরে সালেবাড়ি কলোনীর ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি জয়দেব ঘোষের পরিবারের আবেগিক চিত্র।
জয়দেব ঘোষের সহধর্মিণী নির্মলা ঘোষ জানান দীর্ঘ দিন ধরেই এই দিনের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। স্বামীর নাম বাদ পড়লেও নিজের নাম সংযোজন করা হবে, কারণ প্রথম খসড়ায় নাম ছিল। তবে দ্বিতীয় খসড়ায় থাকবে বলে তিনি আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু তা হয়নি।
তিনি এক এক করে অভিযোগ করে বলেন এনআরসির কাজে নিয়োজিত কর্মীদের গাফিলতির জন্যই আমার স্বামী আজ পর্যন্ত ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি। এই ভাবে সীমান্ত পুলিশ ও ট্রাইব্যুনালগুলি মারাত্নক সব ভুল করে আমাদের মতো হাজার হাজার নিরীহ, হতদ্ররিদ্র মানুষকে বিদেশী বানাচ্ছে। আমার স্বামীর শোকাহত হয়ে আমার এক মাত্র পুত্র মৃত্যু হয়েছে। এই অভিযোগ তুললেন।
সব বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও চুড়ান্ত অব্যবস্থার মধ্যে প্রায় দীর্ঘ তিন মাস ধরে ডিটেনশন ক্যাম্পে দিন কাটাচ্ছেন বদরপুর শহরের রাধানগর এলাকার প্রয়াত বীরেন্দ্র ঘোষের পুত্র জয়দেব ঘোষ। ভারতীয় নাগরিকত্বের বৈধ সমস্ত নথিপত্র রয়েছে তাদের। ব্যাঙ্ক একাউন্ট ভোটার আই কার্ড, ভোটার লিস্ট ইত্যাদি সমস্ত নথিপত্র রয়েছে তাদের।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন মে মাসের এক তারিখ সাধারণ পোষাকে না কি বর্ডার ব্রাঞ্চের পুলিশ এসে জয়দেব ঘোষকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তারা ফোন যোগে বলে যে আপনার এনআরসির কাগজ এসেছে। আপনি এস টি রোডে এসে কাগজ গুলো নিয়ে যান। সেই কথা মতো যাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই তাকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয় ডিটেনশন ক্যাম্পে। কেন ডেকে নিচ্ছে এই ব্যাপারে পরিবারের কাউকে কোন কিছু জানায়নি পুলিশ।
এরপর পরিবারের লোকেরা দৌড়ঝাঁপ করে জানতে পারেন বর্ডার পুলিশ এসে জয়দেব কে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় পরিবারের সবাই অসহায় হতবাক হয়ে পড়েন। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মত উপত্রুম হয় পরিবারের লোকদের। পরিবার বর্গ তার মুক্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। তা যাই হোক জয়দেব ঘোষ শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্পে চরম অব্যবস্থার মধ্যে দিন যাপন করছেন।
ডিটেনশন ক্যাম্পে খাওয়া দাওয়া ব্যবস্থা খুবই শোচনীয়। টাকা দিলে খাওয়ার ব্যবস্থা ভালো হয় বলে জানাগেছে। প্রয়োজনীয় ঔষধ পত্র, খাওয়ার ঘুমাবার কোন ব্যবস্থা নেই। তার পরিবার পরিজন না কি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
এদিকে অন্য সূত্র থেকে জানা গেছে দু এক বার নাকি জয়দেবের কাছে কোন নোটিশ এসেছিল, কিন্তু স্ত্রীর অসুস্থ্য তা আর নিজের আর্থিক দৈন্যদশার কারনে নোটিশের জবাব দিতে ব্যর্থ হন। এলাকার অনেকের বক্তব্য জয়দেব ভারতীয়, তাদের দাবি জয়দেববাবুকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক।
অন্যদিকে, বিশেষ করে নাগরিকত্বের যাঁতাকালে বন্দীশিবিরে যারা মনুষ্যত্বের জীবনযাপন করছেন, যারা নাগরিকত্ব প্রমাণের নথিপত্র নিয়ে জমি বাড়ি বন্ধক রেখে সেবাকেন্দ্রর দরজায় কড়া নাড়ছেন। সরকার যতই ডাক ঢোল বাজায়োক না কেন তাঁদের সমস্যা নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা দিল্লি বা দিসপুর কতটা সচেষ্ট হবেন এখন তা দেখার অপেক্ষায় আম জনতা।