গুয়াহাটিঃ বিষয় সম্পত্তির লোভ যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তারই প্ৰমাণ মিলল গুয়াহাটি(Guwahati) মহানগরে। বন্দনা কলিতা (Vandana Kalita) নামের এক মহিলার ওপর পরকীয়া প্ৰেম এবং সম্পত্তির লোভে পড়ে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে নিজের স্বামী এবং শাশুড়িকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, হত্যার পর দেহ দুটি টুকরো টুকরো করে কেটে ৩ দিন পর্যন্ত ফ্ৰিজে রেখে দেন বলে জানা গেছে। গুয়াহাটি(Guwahati) মহানগরে এই ঘটনা প্ৰকাশ্যে আসার পর গোটা রাজ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত বন্দনা কলিতার (Vandana Kalita) বাবা সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলেন- তাঁর মেয়ে যদি নিজের স্বামী এবং শাশুড়ির হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে তাঁর মেয়েকে গুলি করে মারার জন্য প্ৰশাসনের কাছে আর্জি জানান।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় অভিযুক্ত বন্দনা কলিতার(Vandana Kalita) বাবা আরও বলেছেন: “ওকে (বন্দনা কলিতা) গুলি করে দাও যদি সে অপরাধ করে থাকে। আমি এমন মেয়ে চাই না। সে যদি সত্যিই তাঁর স্বামী এবং শাশুড়িকে হত্যা করে থাকে, তবে তার সাথে আমার কিছু করার থাকবে না।’’
তিনি আরও বলেন- যে তাঁর মেয়ে বন্দনা কলিতা স্বামী এবং শাশুড়ির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়েও তাঁকে কিছু জানায় নি। অন্ধকারে রেখেছিলেন। বলেন- “সে আমাকে কিছুই জানায়নি। তাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে বা সে যে নিখোঁজ এফআইআর দায়ের করেছে সে সম্পর্কেও আমাকে বলা হয়নি। আমাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। সে সবসময় বলতে থাকতো যে পরিবারের সবকিছু ঠিকঠাক চলছে” ।
জানা যাচ্ছে ৭ মাস আগে ঘটনাটি ঘটেছে। মহানগরের নারাঙ্গীর (Narengi) বাসিন্দা অমরজ্যোতি দে(Amarjyoti Dey)। তাঁর মা শংকরী দে(Shankari Dey), থাকতেন চানমারী (Chandmari) এলাকায়। তাঁর ৫টি বিল্ডিং রয়েছে। তারই একটিতে তিনি একা বাস করতেন এবং বাকি বিল্ডিংয়ে ভারা সংগ্ৰহ করতেন অমরজ্যোতির মামা। সেটা নিয়ে মনে মনে ক্ষুন্ন ছিলেন পুত্ৰ বধূ বন্দনা কলিতা(Vandana Kalita)। পরবর্তী সময়ে বন্দনা কলিতা এবং তাঁর স্বামী অমরজ্যোতি দে-র মধ্যে সম্পর্ক বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়িয়েছিল।
৭ মাস আগেই স্বামী এবং শাশুড়ির নিখোঁজ হওয়ার নুনমাটি পুলিশ থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন বন্দনা কলিতা। সেই মামলার ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নেমেছিল। কিন্তু তার মাঝেই বন্দনা কলিতা পুলিশে আরও একটি মমলা দায়ের করেন। মামলায় তাঁর শাশুড়ির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের অর্থ মামা তুলে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত করে দেখে যে অ্যাকাউন্ট থেকে বন্দনা ৫ লক্ষ টাকা উঠিয়েছে। তার পর বন্দনার ওপর পুলিশের সন্দেহ হয়। তারপর গত ১৭ ফেব্ৰুয়ারি নুনমাটি পুলিশ বন্দনাকে আটক করে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত বন্দনা নিজের স্বামী এবং শাশুড়িকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন। পরকীয়া প্ৰেমিক এবং প্ৰেমিকের বন্ধুর সহযোগিতায় এই অপরাধ করেন বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
পুলিশের দল তদন্ত করে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির সোহরাতে (Sohra (Cherrapunji) in Meghalaya) মা এবং ছেলে দুজনের শরীরের টুকরো করা অঙ্গগুলি উদ্ধার করেছে।
উল্লেখ্য যে অভিযুক্ত বন্দনা কলিতা -তাঁর স্বামী এবং শাশুড়িকে হত্যা করার আগে তাঁদের টুকরো টুকরো করে এবং তারপরে তাদের শরীরের অঙ্গগুলি একটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। ৩ দিন পর সেগুলি মেঘায়লের চেরাপুঞ্জিতে গোপনে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেন।
বন্দনা কলিতার সহযোগীরা, যারা তাঁকে হত্যায় সহায়তা করেছিল, তাদের নাম অরূপ ডেকা এবং ধনজিৎ ডেকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। হত্যার ৭ মাস পর রবিবার অর্থাৎ ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ওই নারীর হাতে মা এবং ছেলে খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।