গুয়াহাটিঃ গুয়াহাটিতে জোড়া খুনের ঘটনায় (Double murder case in Guwahati) প্ৰত্যেকদিন নতুন নতুন তথ্য পুলিশের হাতে আসছে। জানা যাচ্ছে খুনের মামলায় অভিযুক্ত বন্দনা কলিতা বিয়ের চার বছর মতো আগে অমরজ্যোতি দে(Amarjyoti Dey)র বাড়িতে কেয়ার টেকার হিসেবে কাজ করতেন। সখানে কর্মরত অবস্থায় বন্দনা অমরজ্যোতির (Amarjyoti Dey) বাড়ির ভেতরের কথা অর্থাৎ তাঁদের বিষয় সম্পত্তি কত রয়েছে সে সম্পর্কে জানতে পারেন। তারপর ধীরে ধীরে বন্দনা এবং অমরজ্যোতির (Amarjyoti Dey) মধ্যে প্ৰেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাঁরা দুই পরিবারের অমতেই বিয়ের বাধনে আবদ্ধ হন।
বিয়ের দুবছর পর থেকেই বন্দনা এবং তাঁর স্বামী অমরজ্যোতি দে-র মধ্যে সম্পর্কে অশান্তি শুরু হয়। পুলিশি তদন্তে এখনও পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, বিয়ের পর বন্দনা (Bandana Kalita) অমরজ্যোতির (Amarjyoti Dey) পরিবারে বউ হয়ে ঢোকার পর শংকরি দে (Shankari Dey) এবং ছেলের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। তারা তখন তিনজনই নারাঙ্গির (Narengi) বাড়িতে থাকতেন।
পরবর্তীকালে ছেলে ছেলের বউয়ের সঙ্গে শংকরী দে-র মনোমালিন্য হয়। একসঙ্গে ঘর করতে না পেরে অবশেষে শংকরি দে(Shankari Dey) নারাঙ্গির ঘর থেকে বেরিয়ে চানমারির ফ্ল্যাটে একা বসবাস করতে শুরু করেন। একটা সময় স্বামী-স্ত্ৰী এবং শাশুড়ি তিন জনের মধ্যেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। তিনজনেই আলাদা থাকতে শুরু করেন। এদিকে বন্দনা কলিতা(Bandana Kalita) ছিলেন উচ্চাকাঙ্খী নারী। নিয়মিত জিম করতেন। জিম ইনস্ট্ৰাকটার হিসেবে নিজের কেরিয়ার গড়তে চাইছিলেন।
পুলিশি তদন্তে এখনও পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে সম্পত্তির লোভই হোক বা অন্য কোনও কারণ, বন্দনা কলিতা(Bandana Kalita) তাঁর দুই সহযোগী ধনটি ডেকা (Dhanti Deka) এবং অরূপ ডেকা(Arup Deka)কে নিয়ে নিজের স্বামী এবং শাশুড়িকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন।
জানা যাচ্ছে, গত বছর ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট থেকে অমরজ্যোতি দে নিখোঁজ ছিলেন। প্ৰাথমিকভাবে পুলিশ মনে করেছিল তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। পরে তদন্তের পর পুলিশ জানতে পারে তাঁকে হত্যা করে ৫ টুকরো করেছেন স্ত্ৰী বন্দনা কলিতা। তার আগে জুলাইয়ের শেষের দিকে বন্দনা তাঁর শাশুড়ি মাকে একই কায়দায় হত্যা করেছে বলে জানা গেছে। দেহ লোপাটের চেষ্টায় মৃতদেহ ৩ টুকরো করে কেটে প্লাস্টিকে মুড়ে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির সোহরাতে গভীর খাদে ফেলেছেন।
গত মঙ্গলবার ২১ ফেব্রুয়ারি, মেঘালয়ের ডাউকির (Dawki in Meghalaya) কাছে বন্দনার স্বামী অমরজ্যোতি দে(Amarjyoti Dey)-এর দেহের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার আগের দিন অর্থাৎ ২০ ফেব্ৰুয়ারি শংকরি দে(Shankari Dey)-র মৃতদেহের অংশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ২৩ ফেব্ৰুয়ারি মহানগরের বোন্দাজান নদী চ্যানেলে জোড়া খুনে ব্যবহার করা দা উদ্ধার করেছে পুলিশ। তীব্ৰ গতিতে চলছে গোটা ঘটনার তদন্ত প্ৰক্ৰিয়া।
মনস্তত্ত্ববিদরা বলছেন- একজন নারী বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে মনের মতো করে সমস্ত কিছু ঠিকঠাক না চললে, কিংবা স্বামীর কাছ থেকে আকাঙ্খিত চাওয়া পাওয়া থেকে বঞ্চিত হলে সাধারণত মেয়েরা হয় আত্মহত্যার পর বেছে নেন, নয়তো নিজের মতো করে সেই পরিবেশ থেকে সরে আসেন। কিন্তু বন্দনা কলিতার ক্ষেত্ৰে ব্যাপারটি অসামাজিক বলা যেতে পারে। এসব হয় পারিবারিক শিক্ষায় ত্ৰুটি থাকলে নয়তো বা আগে থেকেই তাঁর মনে হিংসার মনোভাব সুপ্ত অবস্থায় ছিল যা এতোদিন বহির্প্ৰকাশের সুযোগ পায়নি।