রাজা আসে যায় রাজা বদলায়
নীল জামা গায় লাল জামা গায়
এই রাজা আসে ওই রাজা যায়
জামা কাপড়ের রং বদলায়….
দিন বদলায় না!
নাগরিক পঞ্জি সংক্রান্ত মিছিলে আজ বৃহস্পতিবার পথে নামছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দুপুরে সিঁথির মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত এনআরসি-র বিরুদ্ধে মিছিল করবেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গে নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) হবেই, কলকাতায় এসে নরেন্দ্র মোদির ১০০ দিনের কাজের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে ধরতে জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।
এদিকে আজ দিল্লিতে বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে বসার পূর্ব মুহূর্তে বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষও হুংকার দিয়ে জানিয়ে দিলেন এনআরসি হচ্ছেই।
মমতার পথে নামা নিয়ে তাঁর বক্তব্য আরো শ্লেষযুক্ত শোনাল। বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর পুরনো অভ্যাস আছে কিছু হলেই রাস্তায় নেমে পড়া। বাড়ি থাকতে পারেন না। সেই অভ্যাস বজায় রাখতেই তিনি রাস্তায় নামছেন। ২০২১ সালের পরে তো রাস্তাতেই নামতে হবে। তবে যে-ই রাস্তায় নামুক, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবেই।’’
এদিকে অসমে হিন্দু বাঙ্গালিদেরই করা হয়েছে টার্গেট! ১৯ লক্ষ মানুষের আজ খাওয়া-ঘুম উবে গেছে। তাঁরা মুখে গ্রাস তুলতে পারছেন না। রাষ্ট্রহীন তাঁরা! হ্যাঁ রাষ্ট্রহীনই। কিন্তু এই ১৯ লক্ষ মানুষ কোথায় যাবে? তার কি কোন নিশ্চয়তা দিতে পেরেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ?
রাজ্য বিজেপি নেতারা ভিতরে ভিতরে হতাশ। যা আশা করেছিলেন, তা হল না। ফল হয়েছে উল্টো।
গুয়াহাটির মঞ্চে অমিত শাহের ঘোষণা, কোনও বিদেশি থাকতে পারবেনা অসমে। যেতেও পারবে না অন্য রাজ্যেও। তাহলে এনআরসি-ছুটদের ভবিষ্যৎ কি? নির্বাক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ইত্যাদি ইত্যাদি আইনি রক্ষাকবচের কথা বলা হলেও, এনআরসি ছুটরা বুঝে গেছেন, এই সমস্ত ছড়ায় কোন কাজ দেবে না।
এদিকে নাগরিকপঞ্জিতে নাম না থাকা মানুষের হৃদপিণ্ডের শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হচ্ছে। মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। খবর নেই এই সব মানুষের ভোটেই জয়লাভ করা সরকারের।
বাঙালি রক্ত দিয়ে আসছে, আজও দিচ্ছে। সেই রক্তের দাম দেবার মানুষ নেই। তাঁরা এখনো ‘বিদেশি’ ‘বঙ্গাল’ এইসব তকমা নিয়েই বেঁচে আছে।
পশ্চিমবঙ্গেও এসেছে বহু মানুষের জন্মের শংসাপত্র বা পরীক্ষার ফলাফলের সত্যতা প্রমাণের অনুরোধ। দেখা গিয়েছে বহু যুগ পূর্বের নথির এখন কোনও অস্তিত্বই নেই।
অ–অসমিয়াদের প্রতিপদে নাগরিকত্ব প্রমাণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এত সব সমস্যা থাকলেও আসু কিংবা বিজেপির ‘কোটি–কোটি’ বিদেশি–র মধ্যে মাত্র ১৯ লাখ বিদেশির নাম বের হল! যারা বাদ গেছেন, তাঁদের মধ্যে হিন্দুই বেশি। রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরাও। বাদ নেই পাহাড়ি জনজাতিরাও।
বহু পরিবারে বাবা-মা-দিদির নাম আসছে। অথচ পরিবারের ৬ বছরের আরো একটি সন্তানের নাম নেই! সে কি করে তার অমূল্য জীবনের স্বাদ ভুলে মা-বাবাকে ছেড়ে ডিটেনশান ক্যাম্পে জীবন কাটাবে?
বিজেপি চুপ। কোন কথা নেই।
কিন্তু ২০১৪ সালে শিলচরে নির্বাচনী প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদি বড় গলায় ঘোষণা করেছিলেন, সমস্ত বিদেশি বন্দীশালা গুঁড়িয়ে দেয়া হবে।
কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? নতুন করে আরো বন্দীশালা স্থাপন করা হচ্ছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন বিজেপি অসমের লোকেদের ললিপপ দেখিয়ে ভোটটা আদায় করে নিতে চাচ্ছে। তিনি কি খুব ভুল বলেছিলেন?
এনআরসি সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা এখন সে সমস্ত নেতাদের চোখে পরিণত হয়েছেন খলনায়কে। কারণ, এনআরসি–র দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে।
অসমের মানুষ বোকা নয়। শুধু সঠিক জায়গায় সঠিক প্রশ্ন করতে ভয় পায়। তাই বলতে পারছে না রাজা যে আজ উলঙ্গ!