নবজাগরণের অগ্রদূত’ রাজা রামমোহন রায়ের আজ ২৪৭ তম জন্মবার্ষিকী । তিনি প্রথম ভারতীয় ধর্মীয়-সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালি দার্শনিক।
তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এক নতুন ভারতের । যে ভারতে থাকবে না কোন কুসংস্কার । দেশের মানুষকে অতীতমুখী, মধ্যযুগীয় মানসিকতার গণ্ডি থেকে বের করে এনে এক নতুন যুগের জোবন দর্শনের আলো দেখানোই ছিল তাঁর লক্ষ্য ।
কত নারী তাঁর তাজা প্রাণ হারিয়েছে, কত নারী তাঁর সুখ স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছে স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে। তখন হিন্দু বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরণে যেতে বা আত্মহুতি দিতে বাধ্য করা হত।
রামমোহন রায়ের উদ্যোগে বন্ধ হল কুসংস্কারের জ্বালামুখী প্রকাশ সতীদাহ প্রথা ।
রামমোহন রায় কলকাতায় আগস্ট ২০, ১৮২৮ সালে ইংল্যান্ড যাত্রার আগে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে এই ব্রাহ্মসমাজ এক সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন এবং বাংলার পুনর্জাগরণের পুরোধা হিসাবে কাজ করে।
রামমোহন রায় একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করতেন। তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মূর্তি পূজার বিরোধী ছিলেন। এই বিশ্বাস থেকে তিনি ব্রাহ্মসমাজ ও ব্রাহ্মধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন।
রামমোহন রায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আচরণীয় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান মানতেন না ও তা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতেন।
রামমোহন রায় বেদের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে তাঁর বক্তব্য প্রমাণ করেন।
১৮১৫ থেকে ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রকাশিত হয় বেদান্তগ্রন্থ, বেদান্তসার, কেনোপনিষদ, ঈশোপনিষদ, কঠোপনিষদ, মাণ্ডূক্যোপনিষদ ও মুণ্ডকোপনিষদ।
সমাজের রক্ষণশীল ব্যক্তিরা একরোখা হয়ে ওঠেন রামমোহন রায়ের ওপর । সকলে একাত্ম হয়ে তাঁর লেখার প্রতিবাদ করতে লাগলেন। এই সব প্রতিবাদ কটূক্তিপূর্ণ এবং বিদ্বেষ ভাবাপন্ন।
রামমোহনও প্রতিবাদের প্রতিবাদ করলেন যুক্তি দিয়ে ও ভদ্রভাষায়। প্রতিবাদ-কর্তারা অবিলম্বে থেমে গিয়েছিলেন। প্রতিবাদ-কর্তাদের মধ্যে প্রথম ও প্রধান ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, এঁর গ্রন্থের নাম ‘বেদান্তচন্দ্রিকা’।