কলকাতা: প্রয়াত হয়েছেন রশিদ খান। রশিদ খানকে স্মরণ করলেন লেখক তসলিমা নাসরিন।
ফেসবুকে লিখেছেন:
“খুব ইচ্ছে ছিল একবার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী উস্তাদ রশীদ খানের সঙ্গীত সামনে বসে শুনি। সে হলো না। কলকাতায় কয়েক বছর ছিলাম, সুযোগ হয়নি। হয়তো গেয়েছেন তখন, জানতে পারিনি। আজ যত না আমার জন্য দুঃখ হচ্ছে, তাঁকে না শোনার জন্য, তার চেয়ে বেশি হচ্ছে তাঁর জন্য, পৃথিবীতে তাঁর না-থাকার জন্য।
প্রস্টেট ক্যানসার হলে কত হাজার লোক ভাল হয়ে যাচ্ছে, বছরের পর বছর বেঁচে থাকছে। তবে তিনি কেন বেঁচে থাকলেন না? তাঁকে কি হত্যা করেছে প্রস্টেট ক্যান্সার? ডাক্তার যা বললেন তাতে মনে হলো সেরেব্রাল অ্যাটাক হয়েছিল, রক্ত জমাট বেঁধে ছিল মস্তিস্কের কোনও ধমনীতে, সার্জারি না করে মেডিসিন দেওয়া হচ্ছিল।
হাসপাতালে দীর্ঘদিন ছিলেন, দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকার ফলে কোথাও ইনফেকশান হয়েছে, সেই ইনফেকশান রক্তে ঢুকে গেছে। অগত্যা সেপ্টিসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলো। এই সেপ্টিসেমিয়া সাধারণত হয় হাসপাতালের রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার কারণে।
যে ব্যাকটেরিয়াকে কোনও অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে মারা যায় না। দুঃখ জনক মৃত্যু, মাত্র ৫৫ বছর বয়সে। চিকিৎসা আরও বেটার হলে, আমার বিশ্বাস, বাঁচতে পারতেন।
সেপ্টিসেমিয়ায় মৃত্যুগুলোর দায় সম্পূর্ণই হাসপাতালের। যথেষ্ট জীবাণুমুক্ত করা হয়নি পরিবেশ। আমার বাবা আর আমার বড় ভাই সেপ্টিসেমিয়ায় মারা গেছেন। দুঃখটা আজও বয়ে বেড়াই।
উস্তাদ রশীদ খান উত্তরপ্রদেশের মানুষ হলেও ভালবেসে কলকাতায় বাস করেছেন। যাঁরা কলকাতায় জন্মের কারণে বাস করেন, তাঁদের চেয়ে যে প্রতিভাবান মানুষেরা দূর দেশ থেকে এসে প্রাণের টানে কলকাতায় বাস করেন, তাঁরাই কলকাতাকে, কলকাতা যত না উজ্জ্বল, তার চেয়ে বেশি উজ্জ্বল করেন। কলকাতা হয়তো সবাইকে সম্মান দিতে পারে না। তবে রশীদ খানকে দিয়েছিল। এইটুকুই আপাতত সান্ত্বনা।
কলকাতার বিষয়টায় নিজের নাম না করলেও তসলিমা নিজেকেই বুঝিয়েছেন সেটা স্পষ্ট। যে কোনো প্রসঙ্গেই তসলিমার ‘আমি বন্দনা’ থাকে, এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।