নয়াদিল্লি: “মুকেশ আর নীতা আম্বানি আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার গরিবদের রাজা রানি। আন্টিলিয়া আমাদের বাকিংহাম প্যালেস। অনন্ত আর রাধিকা আমাদের চার্লস ডায়না। সারা বিশ্ব দেখেছিল চার্লস ডায়নার বিয়ে। আমরা গরিবেরা দেখেছি অনন্ত রাধিকার প্রাকবিয়ের অনুষ্ঠান।
জুলাইতে বিয়েও দেখব। রাজপুত্রের বিয়েতে অন্য দেশের রাজারা এসেছেন। রাজায় রাজায় মিল তো থাকেই। রাজায় রাজায় আবার অমিলও আছে। কিছু রাজা দান করেন, কিছু রাজা আর্ন করেন। আর্ন করেন কিন্তু দান করেন না। যাঁরা শুধু আর্ন করেন, তাঁদের ধন সম্পদ ফায়ারওয়ার্ক্সের মতো, সবাই দেখতে পায়।
আমেরিকার উদার ধনীরা নিজের জন্য কিছু রেখে বেশির ভাগ ধন সম্পদ দান করে দেন। ওখানকার প্রায় সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দানের টাকায় চলে। দান না করলে, চ্যারিটি না থাকলে আমেরিকা আমেরিকা হতো না।
আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় ধনীরা দান করেন বটে, তবে সে দান বেশির ভাগই যায় ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোয়, মসজিদ মাদ্রাসায়, মন্দিরে আর গির্জায়। নয়তো ধর্মব্যবসায়ী পীরহুজুর আর বাবা-মাতাদের দান বাক্সে। ধর্ম যত দান পায়, বিজ্ঞান তার সিকিভাগও পায় না।
অথচ শিক্ষিত ধনকুবেররা আমেরিকার বিজ্ঞান গবেষণায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, পাবলিক লাইব্রেরিতে, শিল্প-সাহিত্য একাডেমিতে টাকা ঢালতে কৃপণতা করেন না। দক্ষিণ এশিয়ার ধনকুবেররা দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র ঘোচাতে চাইলে দারিদ্র ঘুচে যেত বলে আমার বিশ্বাস।
কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র ঘোচাতে, নারী নির্যাতন বন্ধ করতে যে বড় অঙ্কের দান আসছে, তার অনেকটাই আমেরিকার ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট আর বিল গেইটস থেকে আসছে।
মার্ক জাকারবার্গ অনন্ত’র ঘড়ি দেখে ‘কুল’ বলেছেন, কিন্তু তিনি কি কখনও ২ বা ৩ মিলিয়ন ডলারের হাতঘড়ি পরবেন। মোটেও পরবেন না। বিয়ের অনুষ্ঠানে না হয় একখানা প্রজাপতি ব্লেজার পরেছিলেন, কিন্তু ফ্যান্সি জামাকাপড় কি তিনি এখন থেকে পরবেন?
মোটেও না। তিনি ওই ২০ বা ৩০ ডলার দামের গ্রে টি-শার্টেই ফিরে যাবেন। বিল গেটসও সাধারণ কফির দোকানের লাইনে দাঁড়িয়ে কফি কিনে খাবেন।
আমাদের সাইকি আলাদা। আমরা গরিব থেকে মধ্যবিত্ত হয়েছি। যাঁদের প্রচুর ধন সম্পদ , তাঁদের আমরা ভগবান জ্ঞান করি। তাঁদের সাফল্য দেখে আমরা শিহরিত হই। তাঁদের চাকরবাকর হতে পারলে ধন্য বোধ করি।
একটা গরিব ভারতীয়কে মুকেশ আম্বানি কেন এত খরচ করেন, কেন দেশের দারিদ্র্য ঘোচান না বলে দেখুন না কেমন গালি খান। ওরা বলবে, ‘তাঁর টাকা আছে, তিনি খরচ করেছেন, তোমার কী?’ ঠিক যেমন করে ব্রিজের তলায় শুয়ে থাকা ক্ষুধার্ত ভিক্ষুকদের দেখে বলবে, ‘ওদের টাকা নেই, ওরা না খেয়ে আছে, তোমার কী?’
অধিকাংশ দক্ষিণ এশিয়াবাসী জানে না, যার অঢেল আছে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত আছে, তার কিছু দায়িত্বও আছে। এখনও ‘যার যার তার তার’ মানসিকতা সেই স্তরে গিয়ে পৌঁছোয়নি যেখানে মানুষ ভাবতে পারে ‘মানুষ মানুষের জন্য’।