‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।’- সুভাষচন্দ্র বসুর এ উক্তি থেকে আর কিছুই বোঝার বাকি থাকে না যে কতটা তেজস্বী নেতা ছিলেন তিনি।
সুভাষচন্দ্র বসু, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক কিংবদন্তি নেতা।
আজ তাঁর শুভ জন্মদিন। তিনি ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি বর্তমান ওড়িশা রাজ্যের কটক শহরে (ওড়িয়া বাজার) জন্মগ্রহণ করেন।
সুভাষ কে? : সুভাষ একটা গন্ধ,যা বারুদের থেকে তীব্র,অ্যামোনিয়ার থেকে ঝাঁঝালো আর কস্তুরীর চেয়ে মিঠে। এই মিঠে সুভাষ গায়ে মেখে স্বাধীনতার প্রথম পতাকার সাক্ষী কোহিমা আজও অপেক্ষা করে সুভাষের। এই গন্ধের ঝাঁঝ সীমান্তে ঘুম ভাঙ্গায় শত্রু পক্ষের। এই গন্ধে বারুদের তীব্রতা ফুসফুসে মিশিয়ে পথে নামে সহস্র যুবক-যুবতী । কখনও রিজওয়ানুরের জন্য । কখনও বা নির্ভয়ার জন্য। সুভাষ সে, যে চোখে চোখ রেখে বলে, স্বাধীনতা চেয়ে পাওয়া যায় না। স্বাধীনতা অধিকার। স্বাধীনতা বিপ্লব। যে বিপ্লব, আজও প্রতিনিয়ত প্লাবিত হয় তোমার আমার রক্তে। শুধু সেই ধ্বনিটা দরকার যে, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতার আশ্বাস দেয় । শুরুতেই বলেছি, সুভাষ একটা গন্ধ । একটা বোধ । তাই হয়তো সুভাষকে ধরা যায় না। সুভাষ স্বাধীন থাকে আমরণ।
নেতাজী ও আজকের ভারত।
নেতাজীর জন্মদিনে তাঁর কয়েকটি বাণী ও ভারতের বর্তমান সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থা –
১.”অন্যায় আর মিথ্যার সাথে
আপস করা মত নিকৃষ্টতম
অপরাধ আর নেই।”
২.”স্বাধীনতা পাওয়া যায় না, ছিনিয়ে নিতে হয়।”
৩. “তোমরা আমাকে রক্ত দাও
আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”…।
৪. ২১শে জুলাই ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু হুগলী জেলার ছাত্র অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে স্মৃতিচারণের মতো বলেছিলেন :- ” রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিজের জীবনের সাধনার ভিতর দিয়া সর্বধর্মের যে সমন্বয় করিতে পারিয়াছিলেন তাহাই স্বামীজির জীবনের মূলমন্ত্র ছিল এবং তাহাই ভবিষ্যত ভারতের জাতীয়তার মূলভিত্তি । এই সর্বধর্মসমন্বয় ও সকল-মত-সহিষ্ণুতার প্রতিষ্ঠা না হইলে আমাদের এই বৈচিত্রপূর্ণ দেশে জাতীয়তার সৌধ নির্মিত হইতে পারিত না ।”
উপরের চারটি উক্তি থেকে আমরা বলতে পারি আপোষহীন সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতা চেয়েছিলেন, আর সর্বধর্ম সহিষ্ণুতা এবং সর্ব মত সহিষ্ণুতার উপরেই তিনি ভারতের জাতীয়তার ভিত্তি গড়তে চেয়েছিলেন | কিন্তু স্বাধীনতা এলো আপোষ ও ধর্মীয় বিভাজনের মাধ্যমে প্রথমেই অখণ্ড ভারতমাতা দুই থেকে তিন খণ্ডে বিভক্ত হয়ে গেল, বাংলা ও পাঞ্জাবও হলো দ্বিখন্ডিত। স্বাধীন ভারতের রাজনীতির গোড়াপত্তন হল ঘৃণ্য তোষন, স্বজনপোষণ ও জাতপাত-ধর্মের রাজনীতি দিয়ে। সেই যে বিষবৃক্ষ রোপিত হয়েছিল উপমহাদেশের মাটিতে আজ তা ফলে, ফুলে ভরে গেছে। এখন সারা দেশে রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মেরুকরণ, বিদ্বেষের বাতাবরণ, স্বাধীনতার ত্যাগব্রতী বিপ্লবীদের জীবনদর্শন থেকে যুব সমাজকে পরিকল্পনা মতো দূরে রাখা হয়েছে | তাই, যুবসমাজও আজ বিভ্রান্ত ! নেতাজীর বাণী, তাঁর জীবন দর্শন আজও প্রাসঙ্গিক।
তাঁর বিপ্লবচেতনার প্রসার হলে তবেই মানুষ বুঝবে কোথায় রাজনৈতিক নেতারা মূল লক্ষ পূরণ না করে সস্তার খেলায় মেতেছে। সামগ্রিক জাগরণ হলে রাজনৈতিক নেতারা বাধ্য হবেন সস্তার রাজনীতি ছাড়তে। এই কারণেই দলমত নির্বিশেষে কোনো রাজনৈতিক দল নেতাজী জয়ন্তীকে দেশপ্রেম দিবসের মান্যতা দেই নি। এই জন্যেই যুবসমাজকে বিপ্লবীদের ত্যাগব্রতের ইতিহাস পড়ানো হয় না | আপোষের স্বাধীনতার ভিত্তিমূলে ছিল ভারতীয় জাতি ধ্বংসের দুষ্ট চক্রান্ত | আজ শুধু দোষারোপ করে কিছু হবে না দ্রুত ঘুরে দাড়াতে হবে |
জয় হিন্দ, জয়তু নেতাজী। নর্থ ইস্ট নাও’ ডিজিটালের পক্ষ থেকে তাঁর চরণে শতকোটি প্রণাম ও শ্রদ্ধা।