বিরসাকে নিয়ে আজো মুন্ডারা গান গায়—
হে ধরতি আবা! জন্ম তোমার চালকাদেতে ভাদ্র মাসে
অন্ধজনের চোখ মিলল ভাদ্র মাসে
চলো যাই ধরতি আবাকে দেখি
এ বড়ো আনন্দ হে, তাঁকে প্রণাম করি
আমাদের শত্রুদের তিনি হারিয়ে দিবেন ভাদ্র মাসে।
উলগুলানের নায়ক বিরসা মুন্ডা । আজ ৯ জুন বিরসা মুন্ডার মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯০০ সালের এই দিনে ইংরেজ শাসকদের বন্দিদশা অবস্থায় মারা যান তিনি। মুন্ডা জনগণের কাছে বিরসা আজ কিংবদন্তি। ভগবান বিরসাকে নিয়ে কত গান, কত গল্প। তাঁর মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অসমের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড০ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
মুন্ডা ভাষায় বিদ্রোহকে বলা হয় ‘উলগুলান’। বিরসার নেতৃত্বে মুন্ডাদের উলগুলান কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। পৃথিবী যখন তথাকথিত সভ্য হয়ে এসেছে, ঠিক সেই সময় ভারতীয় উপমহাদেশের আদি জনগোষ্ঠী আদিবাসীদের অসভ্য বলে, নীচ বলে ঘৃণা করা হয়েছে। আদিবাসীরা অনেক সময়ই চুপ করে এসব সহ্য করেছে।
যখন অন্যায়-নির্যাতন সীমা ছাড়িয়েছে, তখন আদিবাসীরা সংঘটিত করেছে বিদ্রোহ। এটি সেই সময় ইংরেজ শাসকদের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল। তত্কালীন ভারতের ছোটনাগপুরের সিংভূম, রাঁচি, পালামৌ জেলাগুলোয় মুন্ডাসহ অন্য আদিবাসীদের ঘনবসতি ছিল।
ইংরেজদের হাতের মুঠ থেকে দেশমাকে স্বাধীন করার জন্যে বন্দুকের সামনে তীর-ধনুক নিয়ে লড়াই করতে নেমে পড়েছিলেন বীর যোদ্ধা বীরসা মুন্ডা।
ভারত উপমহাদেশে আদিবাসীদের মুক্তির জন্য যুগে যুগে যত মহান নেতা অবতীর্ণ হয়েছেন তাদের মধ্যে বিরসা মুন্ডা একজন। লক্ষ লক্ষ মুন্ডা তাঁকে অনুসরণ করে মুক্তির আশা বুকে ধারণ করেছিলেন। বিরসা মুন্ডা বুঝতে পেরেছিলেন যে ব্রিটিশরা মুন্ডাদেরকে শোষণ করতে আসছে, মুন্ডাদের সম্পদ লুট করে বিদেশে নিয়ে যাবে। এজন্য তিনি মুন্ডাদের মুক্তির পথপ্রদর্শক হিসেবে আবির্ভূত হন। উনিশ শতকের শেষের দিকে আদিবাসীদের নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে আদিবাসীরা সোচ্চার হতে থাকে। ছোটনাগপুর অঞ্চলে তিনি অত্যাচারিত এবং অপদস্ত মুন্ডা আদিবাসীদের বিদ্রোহী নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
“লেখক হিসাবে, সমকালিন সামাজিক মানুষ হিসাবে, একজন বস্তুবাদী ঐতিহাসিকের সমস্ত দায়দায়িত্ব বহনে আমরা সর্বদাই অঙ্গীকারবদ্ধ। দায়িত্ব অস্বীকারের অপরাধ সমাজ কখনোই ক্ষমা করেনা।”
মহাশ্বেতা দেবী সেই জীবনে, সেই সামাজিক অঙ্গীকার পালনে ছিলেন চিরপ্রতিজ্ঞ। বিরসা মুণ্ডাকে নিয়ে সৃষ্টি করেছেন অরণ্যের অধিকার।
নতুন বঙ্গাব্দ আসে, খ্রিস্টাব্দ আসে। কিন্তু স্রোতের গতিমুখ পাল্টায় না। দারিদ্র, ক্ষুধা, বঞ্চনা, পুঁজিবাদীর শোষণে ভারত আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে এক হয়ে যাবে কিনা, সে আশংকা তাঁর মনে। তাই তাঁর চরিত্র সমাজকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচার তাগিদে লড়ে যায়। জয়ী হয়, বেঁচেও থাকে। মহাশ্বেতার কাছে জীবনের দাবী সর্বাগ্রগণ্য। এর থেকে বড় কিছু নয়।
কোল, ভীল, মুণ্ডা, সাঁওতাল, প্রাচীন কাল থেকে যারা পূর্ব-প্রজন্মের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমিতে বসবাস করছে, তাঁদের আচার-আচরণ অনুষ্ঠানাদি অনেক কিছু এখনো আদিম পদ্ধতিতেই পরিচালিত হয়ে আসছে। তাই তাঁদের ‘আদিবাসী’ সাধারণ অর্থে ‘উপজাতি’ও বলা হয়ে থাকে। তাঁরা নিতান্তই নগণ্য; লালসাগ্রস্ত উচ্চবিত্তের কাছে।
দুঃখজনক হলো, সাঁওতালদের ইতিহাস বঞ্চনার ইতিহাস। যে ইতিহাসের শেষ নেই। তাঁরা আজও যুদ্ধ করছে; সামান্য অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ। তীর, ধনুক, কুচিলা, মনোবল আর একতা সহায়।
“আদিবাসী জগৎ প্রাচীন বৃক্ষের মতো। ঘাতকের কুঠারের জন্যে অপেক্ষা করে থাকে।”
কিন্তু যতই যন্ত্রণা, বঞ্চনা থাকুকনা কেন, মহাশ্বেতার শিল্পকর্মে সাঁওতাল জীবন প্রাণ পেয়ে উঠেছে; শোণিতে বয়ে চলেছে ফল্গুধারা।
“বিরসা তাঁদের নেতা। সে মডার্ন ম্যান। এজন্যেই তাঁর অভ্যুত্থান দমন করতে ইংরেজ সরকার এত আগ্রহী হয়।”
মহাশ্বেতার চির প্রতিবাদি কন্ঠ ফিরে গেছে ১৮৫৫-৫৬ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহে। তীক্ষ্ণ লেখনী সাঁওতাল; শুধু সাঁওতাল কেন, সমস্ত সমাজ, দেশের অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, চরিত্রহীনতা, নীচতার উর্দ্ধে উঠে অসীম স্পর্শ করেছে।
“মুণ্ডার জীবনে ভাত একটা স্বপ্ন হয়ে থাকে। ঘাটো একমাত্র খাদ্য যা মুণ্ডারা খেতে পায়, তাই ভাত একটা স্বপ্ন।”
সেই অভিশপ্ত জীবন অতিক্রম করে মুণ্ডা বিরসা উর্দ্ধ গগনে মাদল বাজাতে চেয়েছে; এবং বাজিয়েছে। সে আদেশ শুনেছে যাত্রা করো,” যাত্রা করো যাত্রীদল/ উঠেছে আদেশ।”
“বিরসা জানতো ওকে একদিন লেখাপড়া শিখতে হবে। দিকুদের ভাষা শিখলে তবে ও দিকুদের হাত থেকে জমি-বাড়ি ছাড়াতে পারবে।”
পঁচিশ বছরের যুবক বিরসা সমস্ত বন্ধন অতিক্রম করে অরণ্যের অধিকার চাইল।
অজ্ঞতা ও জড়তা- দুঃখের বোঝা যে কী ভয়ংকর প্রকাণ্ড এবং এই ভার যে দরিদ্র-অসহায় মানুষগুলোর কাঁধে কীভাবে চেপে আছে, সেই উপলব্ধিতে মহাশ্বেতার প্রতিটি সৃষ্টি; লেখনী।
লেখকের ‘অরণ্যের অধিকার’ উপন্যাস আজ সারা বিশ্বে সাড়া জাগিয়েছে। এই পৃথিবী সকলের। আস্তিক-নাস্তিক-ধনী-গরিব-জীব-জন্তু সকলের। কিন্তু লালসার চূড়ান্তে পৌঁছে মানুষ ধ্বংস করছে অরণ্য, লুন্ঠন করছে প্রাণ। চারিদিক শ্মশান। সবুজের আকাংক্ষা এবং মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ‘অরণ্যের অধিকার।’
অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নাম মহাশ্বেতা। মৃত্যু আর ক্ষয়ই জীবনের পথে একমাত্র বাধা নয়। সে পথের আরো এক বড় বাধা অহং, মানসিক বিফলতা। সেই বিফলতাকে সশব্দে আঘাত করেছেন মহাশ্বেতা।
প্রতিবাদ করা আজ অপরাধ। কিন্তু ‘বিরসা’-‘ব্রতী’ তাঁদের জ্ঞান, বুদ্ধি-চেতনা ও বিবেক মতো মানুষকে প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছে। মহান, কালজয়ী লেখকের ধর্ম “সকলের রক্তের রং-ই লাল হয়।”
মহাশ্বেতার ধর্ম মানব ধর্ম। যে ধর্ম আমাদের জীবনের ভিতরে সংসারের দুখ-তাপে ক্রিস্টালাইজড হয়ে ওঠে সেই আমার যথার্থ।”
মহাশ্বেতার ক্ষুরধার কলম একটি নিগূঢ়, অন্তরিন্দ্রিয়তা, সমস্ত অধিকার বঞ্চিত চরিত্রে সৃষ্টি করেছে বহ্নি। যে বহ্নি তুচ্ছতাকে ধ্বংস করে, আবার আকাশ আলোকময় করে।
মহাশ্বেতা দেবীর মুক্ত সত্ত্বা উত্তীর্ণ হতে চেয়েছে জ্যোতির্ময় আলোকে, অসীমে। চরম দুঃখকে তিনি পরিণত করেছেন আনন্দে। অতীতের গ্লানি, বর্তমানের হতাশা, ভবিষ্যতের আশায় পরিণত হয়েছে।
তাই “উলগুলানের শেষ নাই। ভগবানের মরণ নাই”।
জীবন, বিদ্রোহ, যা কিছু চলমান তার সত্যতা, নিষ্ঠা কোন কালে কোন দেশে নেতার মৃত্যুতে শেষ হয়না। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অন্যায়ে সে মহামানব যুগে যুগে ফিরে আসবে বিরসা হয়ে!
“উদয় শিখরে জাগে মাভৈঃ মাভৈঃ রব
নব জীবনের আশ্বাসে।”
ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে অতি গরমের ফলে হিটস্ট্রোকে ৩৭ জন মারা গিয়েছেন।…
ঢাকা: বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বিঘ্ন ঘটছে। যাকে রেলের ভাষায় বলা হয়…
মেষ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য সপ্তাহটি ভালোই হতে চলেছে। অর্থ উপার্জন হবে। সমাজে সম্মান বাড়বে।…
ঢাকা: বাংলাদেশে চলতি বছর সীমাহীন তাপদাহে মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে সরবোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে…
সিংহ: আজকের দিনটি আপনার জন্য নতুন কিছু শেখার দিন হবে। ভাগ্যের দিক থেকে দিনটি ভালোই।…
ঢাকা: বাংলাদেশে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আবুল কালাম (২৫)…