মতুয়া সমাজের শিরোমণি বীনাপানি দেবী ওরফে বড়মার মৃত্যুর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই, মতুয়া মহাসংঘের নেতৃত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতি ।
মতুয়াদের নেতার শিরোপা, কার দখলে যাবে তা নিয়ে বড়মার দুই ছেলের মধ্যে চলা অঘোষিত লড়াই, প্রকাশ্যে এসেছে । বলতে গেলে মতুয়াদের ওপর বিজেপি না তৃনমূল কংগ্রেস দলের প্রভাব বেশী থাকবে, তারই লড়াই শুরু হয়েছে । উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় এক কোটি মতুয়ার বসবাস ।
রাজ্যের দুটি জেলা, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যে কোন নির্বাচনে মতুয়ারাই প্রার্থীদের জয় -পরাজয় নিশ্চিত করে । এই অবস্থায় এই সমাজের নেতৃত্ব নিয়ে লড়াই হওয়া স্বাভাবিক । হয়েছেও তাই । মতুয়া মহাসঙ্ঘের মুখ্য উপদেষ্টা তথা বংগভূষন বীণাপাণি ঠাকুর ওরফে বড়মার মৃত্যুর পরই তার মৃত্যু স্বাভাবিক কী না ? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বড়মার ছোট ছেলে মঞ্জুল কৃষ্ণ ঠাকুর ও নাতি শান্তনু ঠাকুর ।
শুধু প্রশ্ন তোলাই নয়, বড়মার মৃত্যুর উচ্চস্তরের তদন্ত দাবি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যে পত্র লিখেছেন তারা । প্রয়োজনে বড়মার মৃত্যুর তদন্ত সিবিআই কে দিয়ে করানোর দাবীও তুলেছেন শান্তনু বাবুরা। উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারী মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ঠাকুরনগরে এনে বড়মার সঙ্গে তার আলোচনার ব্যবস্থা করেছিলেন শান্তনুবাবু । বড়মার মৃত্যু নিয়ে শান্তনুবাবুদের সন্দেহের কারণ কী সে কথাও জানিয়েছেন তিনি ।
২৮ ফেব্রুয়ারি বড়মা অসুস্থ হওয়ার পর কেন তাকে কাল্যানী জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শান্তনু । শান্তনুর দাবী, কাল্যানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঠাকুর পরিবারের সম্পর্ক ততটা মধুর ছিলো না । এই অবস্থায় কেন তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হল ? এই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি । তাছাড়া বড়মার শারীরিক অবস্থার বিশেষ অবনতি হওয়ার আগেই । সেখান থেকে কেন তাঁকে কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে আনা হল না ? তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শান্তনু শিবির ।
এদিকে বড়মা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তার দেখাশোনা করেছেন বড়মার বড় পুত্রবধূ তথা তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুর । এমনকী ঠাকুরনগরে বড়মার শেষকৃত্যেও তদারকি করেছেন তারা । তাদের বিরুদ্ধে শান্তনু বাবুদের অভিযোগ, বড়মা অসুস্থ হওয়ার পরও তাদের খবর দেননি মমতা ঠাকুরেরা ।
এদিকে বড়মার মৃত্যুতে তীব্র শোক ব্যক্ত করে, সম্পূর্ন রাজ্যিক মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ঠাকুরনগরে বড়মার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে । তাঁর মৃত্যুতে তীব্র শোকব্যক্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বীণাপানিদেবীর মৃত্যু তার ব্যক্তিগত ক্ষতি । এই প্রেক্ষাপটে বলা যায় বড়মার মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গের মতুয়ারা বিজেপি ও তৃনমূলে, কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত । এদিকে লোকসভা নির্বাচন শিয়রে । এই অবস্থায় মাতুয়াদের বেশীর ভাগ কোন দলের দিকে ঝুকবে সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন ? এদিকে মতুয়াদের নেতৃত্ব কার দখলে যায়, তা দেখতে মুখিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ ।