“ভালোবাসি এই মানুষটাকে। এই খানকে। এই ইরফান খানকে। কীভাবে কাজ করতে হয় অন্য খানদের শেখা উচিৎ এই খান থেকে।” ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখে বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন সদ্য প্রয়াত বলিউড অভিনেতা ইরফান খান সম্পর্কে অসাধারণ মুক্ত এই মন্তব্য করেছিলেন।
তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, আসলে ইসলাম ধর্মাবলম্বী লোকদের ইরফান খান থেকে সঠিক আচরণটুকু শেখা উচিৎ! শিল্পীর মৃত্যুতে ৭ বছর পূর্বের সেই কথার স্মৃতিচারণ করলেন।
লিখছেনঃ
“লাঞ্চবক্স দেখার পর আমি টুইট করেছিলাম। ইরফান খান উত্তর দিয়েছিলেন। ওঁর মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছি। এত প্রতিভাবান অভিনেতা আমাদের এ অঞ্চলে খুব বেশি নেই তো!
আমার ছোটদারও ক্যান্সার হয়েছিল। দীর্ঘদিন কিমোথেরাপি নেওয়ার কারণে ক্যান্সার কমে গেলেও অন্ত্রে ইনফেকশান হয়েছিল। ছোটদা হাস্পাতালে ভর্তি হয়েছিল অন্ত্রের ইনফেকশান সারাতে, ওখানেই সুপারবাগের কামড়ে সেপ্টিসেমিয়া, মৃত্যু। ক্যান্সারের প্রচুর রোগী ক্যান্সারে মারা যায় না, যায় কিমোথেরাপির সাইডইফেক্টে।
ব্যক্তি ইরফান খানের সংগে আমার কোনওদিন দেখা হয়নি। তাঁর অভিনয়ের সংগে দেখা হয়েছিল শুধু। ওটিই আসল দেখা হওয়া। লেখক শিল্পী, দার্শনিক মনিষীদের কাজটুকুই দেখতে হয়।”
Remembering. pic.twitter.com/1ZTnARtHo8
— taslima nasreen (@taslimanasreen) April 29, 2020
প্রকৃতার্থে জীবনে সৎ, মানবিক, সর্বোপরি একজন সত্য মানুষই সুদক্ষ অভিনেতা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক হতে পারে।
ভারতীয় অভিনয় জগতের তারকা শিল্পী ইরফান খানও তেমনই একজন মানুষ ছিলেন।
সুদক্ষ এই অভিনেতা মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেছেন। শোকস্তব্ধ গোটা ভারত-বাংলাদেশ।
ইরফান খানের আন্তরিক ইচ্ছে ছিল বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করার। কথা দিয়েছিলেন তিনি “আবার কথা হবে, দেখা হবে।” কারণ আরো কিছু বাংলা সিনেমায় অভিনয়ের ইচ্ছা ছিল তাঁর। নিজের বাংলাটাকে আরও একটু পোক্ত করে বাংলাদেশের দশর্কদের সামনে আসতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, ’তোমার দেশের দশর্কেরা আমাকে ভাঙাচোড়া বাংলা বলার জন্য ক্ষমা করলে একটু সাহস পাব। তখন আবার বাংলা ছবিতে অভিনয় করব।’ ইরফান তাঁর কথা রাখতে পারলেন না। ক্যানসারের কাছে হার মেনে চলে গেলেন। বাংলা ভাষাটা কতটা আয়ত্তে আনতে পেরেছিলেন, সেটাও আর জানা হলো না।
ইরফানের খানকে সামনে থেকে দেখা অথবা না দেখা বহু অনুরাগী প্রথম অবস্থায় ভেবেই নিতেন, ইরফান একজন রাশভারী মানুষ। কিন্তু আদতে তিনি ছিলেন একজন মুক্তমনের স্বচ্ছ মানুষ।
বলিউড-হলিউড ছাড়াও ইরফান খান অভিনয় করেছিলেন যৌথ প্রযোজিত বাংলা সিনেমা ‘ডুব’-এ। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায় প্রথমবার অভিনয় করেছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রটির জন্যে ইরফান খান গিয়েছিলেন বাংলাদেশেও।
ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘ডুব’র ক্রিয়েটিভ প্রডিউসার ছিলেন ইরফান খান। বাংলাদেশ থেকে জাজ মাল্টিমিডিয়া এবং ভারত থেকে এসকে মুভিজ এই সিনেমার প্রযোজনা করেছিল। এতে ইরফানের পাশাপাশি অভিনয় করেছিলেন রোকেয়া প্রাচী, নাদের চৌধুরী, নুসরাত ইমরোজ তিশা, পার্ণো মিত্র প্রমুখ। বহু সমালোচনার পর গত ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবরে সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।
প্রতিভাসম্পন্ন অভিনেতা প্রত্যেক দর্শকের হৃদয়ে আজীবন লালিত থাকবেন।