সাহিত্যিক, নির্মাতা, শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এরকম বহু পরিচয়ে যাকে ডাকা যায়, তিনি সত্যজিৎ রায়। আজ তাঁর ৯৮তম জন্মদিন। শুধু বাংলা ভাষাভাষি অঞ্চলের নয়, উপমহাদেশের এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব তিনি। তবে নির্মাতা হিসেবেই তিনি বিশ্বে জনশ্রুত, জনপ্রিয়।
১৯২১ সালের এই দিনে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্ম সেখানে হলেও বাংলাদেশের সাথে ছিল তাঁর রক্তের সম্পর্ক। সত্যজিৎ রায়ের পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার বড় মাসুয়া গ্রামের অধিবাসী ছিলেন।
চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সত্যজিৎ চিত্রনাট্য রচনা, চরিত্রায়ন, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, চিত্র গ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, সম্পাদনা, শিল্পী-কুশলীদের নামের তালিকা ও প্রচারণাপত্র নকশা করা সহ নানা কাজ করেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, সংগীত পরিচালক কল্পকাহিনী লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক।
সত্যজিতের কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু হলেও প্রথমে কলকাতায় ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে সাক্ষাৎ ও পরে লন্ডন শহরে সফররত অবস্থায় ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী ছবি লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন।
‘পথের পাঁচালী’ সিনেমা নির্মাণের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায়ের যাত্রা শুরু। এরপর একে একে নির্মাণ করেন, পরশ পাথর , জলসা ঘর, অপুর সংসার, অভিযান, মহানগর, কাপুরুষ ও মহাপুরুষ , নায়ক, গুপি গাইন বাঘা বাইন , অরণ্যের দিন রাত্রি, সীমাবদ্ধ, অশনি সংকেত সোনার কেল্লা জন অরণ্য, শতরঞ্জ কি খিলাড়ী, জয় বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, গণ শত্রু , শাখা প্রশাখা এবং সর্বশেষ বানানো সত্যজিতের সিনেমার নাম আগুন্তুক।
সত্যজিৎ রায় নির্মিত প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’ ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে, যাদের মধ্যে অন্যতম ছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া “শ্রেষ্ঠ মানব দলিল” পুরস্কারটি।
ফ্রান্সের সরকার ১৯৮৭ সালে তাঁকে সেদেশের বিশেষ সম্মনসূচক পুরস্কার ‘লেজিওঁ দনরে’ প্রদান করেন। ১৯৮৫ সালে অর্জন করেন ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার ভারত রত্ন সম্মাননা প্রদান করে। এছাড়াও তিনি পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
২০০৪ সালে, বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় ১৩ তম স্থান লাভ করেছিলেন সত্যজিৎ।
বাংলা চলচ্চিত্রের এই দিকপাল ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।