বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতের শ্রেষ্ঠ পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের আজ ২৭ তম মৃত্যু বার্ষিকী। তিনি শুধুমাত্র পরিচালক নন, ছিলেন চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সঙ্গীত পরিচালকও।
১৯২১ সালের ২মে কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন সত্যজিৎ রায়। তাঁর পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে।
তাঁর কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু হলেও পরে লণ্ডন শহরে সফরকালে ইতালীয় চলচ্চিত্র দেখার পরই তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন।
সত্যজিৎ রায় প্রায় ৩৭ টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তিনি ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক, প্রকাশক এবং চলচ্চিত্র সমালোচকও।
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সত্যজিৎ ছিলেন বহুমুখী এবং তাঁর কাজের পরিমাণ বিপুল। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সত্যজিৎ চিত্রনাট্য রচনা, চরিত্রায়ন, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, সম্পাদনা, শিল্পী-কুশলীদের নামের তালিকা ও প্রচারণাপত্র নকশা করা সহ নানা কাজ করেছেন।
‘পথের পাঁচালি’ সিনেমা নির্মাণের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায়ের যাত্রা শুরু। তাঁর নির্মিত পথের পাঁচালি (১৯৫৫) ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। এর মধ্যে অন্যতম ১৯৫৬ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া “শ্রেষ্ঠ মানব দলিল” পুরস্কার। পথের পথের পাঁচালি, অপরাজিত এবং অপুর সংসার এই তিনটি একত্রে অপু ত্রয়ী নামে পরিচিত। এই ত্রয়ী সত্যজিতের জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্মজীবন হিসেবে স্বীকৃত। কর্মজীবনে তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারও লাভ করেছেন।
এরপর একে একে নির্মাণ করেন, পরশ পাথর , জলসা ঘর, অপুর সংসার, অভিযান, মহানগর, কাপুরুষ ও মহাপুরুষ , নায়ক, গুপি গাইন বাঘা বাইন , অরণ্যের দিন রাত্রি, সীমাবদ্ধ, অশনি সংকেত সোনার কেল্লা জন অরণ্য, শতরঞ্জ কি খিলাড়ী, জয় বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, গণ শত্রু, শাখা প্রশাখা এবং সর্বশেষ বানানো সত্যজিতের সিনেমার নাম আগুন্তুক। সত্যজিতের অমর সৃষ্টি ‘ফেলুদা’ তাঁর সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর বয়ে চলছে যুগ থেকে যুগান্তরে।
১৯৪৭ সালে সত্যজিৎ চিদানন্দ দাসগুপ্ত ও অন্যান্যদের সঙ্গে মিলে কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।
সত্যজিতকে অন্যতম সাংস্কৃতিক আইকন হিসেবেও গণ্য করা হয়।
ফ্রান্সের সরকার ১৯৮৭ সালে তাঁকে সেদেশের বিশেষ সম্মনসূচক পুরস্কার ‘লেজিওঁ দনরে’ প্রদান করেন। ১৯৮৫ সালে অর্জন করেন ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার ভারত রত্ন সম্মাননা প্রদান করে। এছাড়াও তিনি পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
২০০৪ সালে, বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় ১৩ তম স্থান লাভ করেছিলেন সত্যজিৎ।
হৃদযন্ত্রের জটিলতার কারণে সত্যজিৎ ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
শুধুমাত্র ভারতে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় চলচ্চিত্র জগতে সুনাম অর্জন করেছেন পরিচালক সত্যজিৎ রায়।
ভারতের চলচ্চিত্র জগত যাত্রা শুরু করে সত্যজিতের হাত ধরেই।
সত্যজিৎ রায় বেঁচে আছেন তাঁর ছবির মধ্যে, বেঁচে আছেন তাঁর লেখনির মধ্যে দিয়ে।