শুধু জাতির জীবনে নয়, সংস্কৃতির মূল ঐতিহ্যই হচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব । আমাদের সংস্কৃতি কতো পুরনো তা জানানোর একমাত্র মাধ্যম প্রত্নতত্ত্ব। বর্ধমানের গলসী থানার ভুঁড়ি গ্রামের জুজুটি দামোদর তীরবর্তী মনোরম এলাকা। পিকনিকের জন্য শ্রেষ্ঠ স্থান বলে বিবেচিত। মানুষের ভ্রমণ পিপাশা মেটানোর জন্যে ভুঁড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত ১০০ দিনের একটি প্রকল্পে বিনোদন পার্ক গড়ে তোলার জন্যে ১২০০ শ্রমিক কাজে লাগান।
পঞ্চায়েত প্রধান সুবোধবাবু প্রদত্ত তথ্য মতে, মাটি খুঁড়তে গিয়ে দুটি মন্দির বেরিয়ে আসে। ৮ অক্টোবর গ্রামের শ্মশান ঘাট এলাকায় মাটি খোঁড়া শুরু হয়, পরদিন মোটামুটি ৪ ফুট মাটি কাটার পর শ্রমিকদের চোখে পড়ে মন্দিরের চূড়া। খানিক দূরে আরো একটি। মানুষ চিরকালই ‘পুরানো’র প্রতি আকৃষ্ট। সে চোখের দেখা,প্রাণের কথা ভুলে না। ঘটনার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো জুজুটি এলাকায়। আশ্চর্য বিষয়টি জানানো হয়েছে গলসীর বিডিও শঙ্খ ব্যানার্জী এবং প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদকে।
পুরাতত্ত্ববিদ শ্রমিকদের সাবধানতা বজায় রাখতে বলেন খনন কাজে। খুব সম্ভবত মন্দির দুটোকে শিব মন্দির ধারণা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ যুগ বা তারো আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোন কারণে মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকতে পারে বলে জানান সুবোধ বাবু। ইংরেজ রাজত্বে এই জায়গায় গ্রামবাসীকে বন্যার আগে সতর্ক করার জন্যে একটি ‘লাইট হাউস’ ছিল। দামোদরের আরো কাছে থাকা জুজুটি প্রাকৃতিক পরিবেশে ছিল অনন্য। যান্ত্রিক যুগে তা আজো বজায় আছে।
বিনোদন পার্ক সঙ্গে প্রত্নতত্ত্বের আবিষ্কার স্বাভাবিক ভাবেই জুজুটিকে দর্শক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলবে।মন্দির যেন কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, প্রশাসনের কাছে উপযুক্ত সংরক্ষণের আবেদন জানাবেন ঘোষবাবু।তাঁরমতে মন্দির ২৫০ বছর পুরনো যদিও
ইতিহাসবিদ ডাঃ সর্বজিত জানান, বর্ধমান রাজার আমলে তৈরি মন্দিরগুলো প্রায় ১৫০ বছর পুরনো। দামোদর জলস্তরের নিচে থাকায় অষ্টাদশ-উনবিংশ শতকে প্রবল জলে ক্ষতি হয় শহরের। ফলে ১৯১৫ ও ১৯৪৬ সালে বর্ধমানের উত্তরদিকে মাটির বাঁধ দেওয়ার সময়ই চাপা পড়ে বহু মন্দির। যা আস্তে আস্তে উঁকি দিচ্ছে কখনো।
সর্বজিত বাবুর ধারণা এমন বহু মন্দির এখনো রয়েছে দামোদরের বাঁধ বরাবর।