আড্ডায় বসলে আজও যে গানটি মনের অজান্তে চলে আসে তা হলো ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’। ক্যাম্পাসে বা বন্ধুদের আড্ডায় এই গানটি আজও সবার কাছে জনপ্রিয়। এই গানের রূপকার প্রতীভাবান সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে।
আধুনিক বাংলা গানের জগতে সব স্তরের শ্রোতাদের অত্যন্ত প্রিয় কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে’র আজ ১০১তম জন্মদিন।
বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, আসামীয়াসহ বিভিন্ন ভাষায় অজস্র গান গেয়ে বিশ্ব সঙ্গীত জগতে বিখ্যাত হয়েছিলেন তিনি। বৈচিত্র্যের বিচারে তাকেই হিন্দি গানের ভুবনে সর্বকালের সেরা গায়ক হিসেবে অনেকেই গণ্য করেন।
মান্না দে, ১৯১৯ সালের ১লা মে কলকাতার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম পূর্ণ চন্দ্র দে এবং মায়ের নাম মহামায়া। মান্না দে’র প্রকৃত নাম প্রবোধ চন্দ্র দে হলেও সঙ্গীত জগতে তিনি ‘মান্না দে’ নামেই পরিচিতি লাভ করেছিলেন। কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার এবং মুকেশদের মতো তিনিও ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ দশক পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। সঙ্গীত জীবনে তাঁর রেকর্ডিং এর সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি।
১৯৪৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তামান্না’ চলচ্চিত্রে গায়ক হিসেবে তাঁর সর্বপ্রথম অভিষেক ঘটে।
মান্না দে’র গাওয়া কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’, ‘আবার হবে তো দেখা’, ‘এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা পাখি’, ‘যদি কাগজে লেখো নাম’, ‘সে আমার ছোট বোন’ ইত্যাদি।
২০০৫ সালে বাংলা ভাষায় তার আত্মজীবনী ‘জীবনের জলসাঘরে’ খ্যাতিমান আনন্দ প্রকাশনীর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পরে এটি ইংরেজি, হিন্দি এবং মারাঠী ভাষায় ভাষান্তর হয়। মান্না দে’র জীবনী নিয়ে ‘জীবনের জলসাঘরে’ নামে ২০০৮ সালে একটি তথ্যচিত্রও মুক্তি পায়।
মান্না দে সঙ্গীত অ্যাকাডেমি তাঁর সম্পূর্ণ আর্কাইভ বিকশিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে। প্রখ্যাত রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় মান্না দের সঙ্গীত সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।
সঙ্গীত ভুবনে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ১৯৭১ সালে পদ্মশ্রী, ২০০৫ সালে পদ্মবিভূষণ ও ২০০৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে সম্মাননায় অভিষিক্ত করে। এছাড়াও ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে রাজ্যের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান বঙ্গবিভূষণে ভূষিত করে।
২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৯৪ বছর।