ভারত সরকারের তরফ থেকে শেষবারের মতো রেশন বন্ধ করে দেওয়ার পর ত্রিপুরার ত্রাণ শিবিরে ব্রু লোকেরা বুভুক্ষু অবস্থায় মারা যাচ্ছে।
মিজোরাম ব্রু ডিসপ্লেসড পিপলস ফোরাম (MBDPF) নর্থ ইস্ট নাও-কে জানিয়েছেঃ ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর,নাইসিংপাড়ার এবং হামসা পাড়া ব্রু শরণার্থী শিবিরে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে।
এমবিডিপিএফ নেতারা আরো জানাচ্ছেন, “খাবার না পেয়ে করুণ মৃত্যুকে গ্রহণ করে নিয়েছে ৩ বছরের আজিতারি রিয়াং এবং ৪ মাসের শিশু পিগলি রিয়াং। ৩ নভেম্বরে মণিরাম মলসৈর ২ বছরের পুত্র আকস মলসৈ এবং ঘমা রিয়াংয়ের স্ত্রী বৃষ্টিরুং রিয়াং (৬৫ বছর) বৃদ্ধ এবং জন সংপ্রেংথ নামের একজন ২ বছরের শিশু মারা গেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এর জন্যে দায়ী।”
এখনও পর্যন্ত সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা এবং পানীয় জলের জোগান পৌঁছয়নি বলে জানিয়েছেন এমবিডিপিএফ নেতৃত্ব। তাঁদের অভিযোগ, চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে ত্রিপুরা সরকার। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে উদ্বাস্তুদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলছে ত্রিপুরা সরকার, যাতে রাজ্য থেকে বেরিয়ে যান তাঁরা।
ফোরামের নেতা আরো জানিয়েছেন, খাদ্যের অভাবে মায়ের স্তন শুকিয়ে যাচ্ছে, শিশুরা মুখ ফেটে, বুক ফেটে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। পরিস্থিতি দিনের পর দিন আরো মন্দার দিকে গতি করছে।
তিনি বলেন, শিবিরে বহু বয়স্ক মানুষ এবং শিশুরা গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
বৰ্তমান ত্রিপুরায় থাকা মিজোরামের সাংসদ রোনাল্ড চাপা ব্রুদের ভয়াবহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্যে কেন্দ্রীয় গৃহ বিভাগের তরফ থেকে শীঘ্রই একটি দল পাঠানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।
ভয়ংকর, মানবতাহীন এই ঘটনায় ত্রিপুরার বিরোধী দল তীব্র সমালোচনা করেন বিপ্লব দেব সরকারের।
“এই মানুষগুলো শুধুমাত্র না খেতে পেয়ে প্রাণ হারাচ্ছে, আর আমাদের সরকার এখনো মুখ বুজে রয়েছে। সরকার যে কাজ করছে তা অত্যন্ত অমানবিক।”
ব্রু লোকেদের শিগগির খাবার জোগানের জন্যে আহ্বান জানিয়েছেন ত্রিপুরা কংগ্রেসের মুখপাত্র তাপস দে।
সিপিআইএম(এ) ব্রুদের জন্যে ফের সাহায্য শুরু করার জন্যে সরকারের প্রতি দাবী জানিয়েছেন।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, শিবিরে বহুদিন ধরে অবস্থান করা ব্রুদের প্রথম মিজোরামে যাওয়া উচিৎ।
“কোন বিকল্প নেই, তাঁরা প্রথমে গৃহভূমি মিজোরামে ফিরে যাক, কেন্দ্র এবং মিজোরাম সরকার তাঁদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।” সংবাদ মাধ্যমে এ কথা জানিয়েছিলেন বিপ্লব দেব।
বিগত অক্টোবর মাসে ব্রু লোকেদের মিজোরামে পুনর্বার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কেন্দ্র। কিন্তু নবমবারের প্রচেষ্টাও বিফল হওয়ার পর সমস্ত সাহায্য বন্ধ করে দেয়া হয় কেন্দ্রের পক্ষ থেকে।
এই প্রচেষ্টাকে ‘অন্তিম’ বলে উল্লেখ করে কেন্দ্র বলেছিল, ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরে থাকা শরণার্থী শিবির আর রাখা হবে না।
কিন্তু, খবর পাওয়া গেছে, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা সরকারের প্রচেষ্টায় ২৩ অক্টোবর প্রায় ৭০০ লোক (১২৫ টি পরিবার) নিজস্ব ভূমিতে ফিরে যেতে রাজি হয়েছিল।
এদিকে গৃহহীন, খাদ্যহীন শরণার্থী ব্রু’রা পথে নেমে এসেছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত বিগত এক সপ্তাহ ধরে তাঁরা আনন্দবাজার দাশ্বদা পথ অবরোধ করে রেখেছে।
ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ হয়ে পড়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে সংখ্যাগুরু মিজোর সঙ্গে হওয়া সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পর ৩০/৪০ হাজার ব্রু ত্রিপুরায় আশ্রয় নেয়।
বর্তমান সময়ে মিজোরামে প্রায় ৪০ হাজার ব্রু মানুষ অবস্থান করার বিপরীতে উত্তর ত্রিপুরার শরণার্থী শিবিরে প্রায় ৩০ হাজার ব্রু লোক আশ্রয়রত।