ভারত-বাংলাদেশে চলমান লকডাউনের সময়কালে নারী নির্যাতনের হার আরো বেড়েছে!
ন্যাশনাল কমিশন ফর উইম্যানের রিপোর্ট বলছে, উত্তর পূর্ব ভারতের অসম, ত্রিপুরা এবং ওদিকে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রে বৃহৎভাবে নারী নির্যাতন বাড়ছে।
কমিশন এই বিষয়টি লক্ষ করেছে যে, করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউন পিরিয়ডে উক্ত ৫ রাজ্য থেকে নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের সর্বাধিক সংখ্যক মামলা পাওয়া গেছে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ধর্ষণ; নির্যাতনের সংখ্যা কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। এবং হবেও না। যতদিন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ আছে, ততদিন নির্যাতনের অস্তিত্ব থাকবেই!
বাংলাদেশেও শিশু-মহিলা নির্যাতনের হার বৃদ্ধি ঘটেছে। বাংলাদেশ প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০২০ বছরের মার্চ, এপ্রিল এবং মে এই তিন মাসে ৪৮০ নারী এবং শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৬৭ জন মহিলা ও ২১৩টি শিশু। এছাড়াও বিকৃতকাম পুরুষদের দ্বারা ধর্ষণ হয়েছেন ওপার বাংলার ১১৬টি শিশু-সহ ২০৬ মহিলা।
ধর্ষণ; নির্যাতন; শোষণ নতুন কোন বিষয় নয়। প্রতিদিন শুনতে শুনতে সমাজের চোখ সওয়া হয়ে গেছে। আসলে অপরাধ;অন্যায়গুলো এমনই। শিশু অবস্থায় এর বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে পরে সেগুলো রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। সেগুলো ‘ভয়ংকর’ এর সারি থেকে নেমে ‘সাধারণের’ সারিতে স্থান নেয়। এমনই হয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী নির্যাতনের বিষয়টি। এটি এখন জলভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশে ৮ থেকে ৮০ কেউ বাদ যাচ্ছে না ধর্ষণের তালিকা থেকে! প্রাপ্তবয়স্ক, মেয়ে, গৃহবধূ, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী থেকে শুরু করে দুই-তিন বছরের কোমলমতি শিশু- কেউ রেহাই পাচ্ছে না বিকৃত মস্তিষ্ক পুরুষদের থেকে। এছাড়া বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ভয়ানকভাবে ধর্ষণের শিকার। সেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে চলে নির্যাতন। মাদ্রাসাগুলোতে ধর্ষণ থেকে শুরু করে জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন করা হয়৷ বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা শিশু সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠান, কিন্তু তারা এই অপরাধগুলো নিয়ে কথা বলেন না এটা ভেবে যে এতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি হবে৷
‘অবোলা’ হয়ে থাকলে যে দিনে দিনে অপরপক্ষের সাহস; শক্তি; কাম সবটাই বেড়ে উঠছে এবং আরো উঠবে সে বাস্তব বিষয়টি বোঝার সময় কী এখনো আসেনি?
একটি মেয়ে যখন ধর্ষণের শিকার হন, তখন তার মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে, তা কি আমাদের ভেবে দেখা উচিত নয়? আমরা কি ভেবে দেখেছি, একজন মেয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ওই ঘটনা তাকে সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়ানোর ফলে তার সমস্ত ইতিবাচক কাজ করার ক্ষমতা নেই হয়ে যায়। তাঁর শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসকের কাছেও নেয়া উচিৎ?
সন্তানের জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষক তাঁর মা-বাবা-পরিবার। অথচ দেখা যায় সেই পরিবারই মেয়েটির পাশে দাঁড়াচ্ছে না! মা দাঁড়ালেও বাবার সমাজের রক্তচক্ষুর দিকে ভয়! প্রসঙ্গ একটাই ‘সমাজ কী বলবে’? সেই সমাজের প্রথম সারিতেই তো পড়ছে সেই পরিবারটি! একবারও কী সে কথা চিন্তা করা হয়? নির্যাতিতা মেয়েটিকে বুকের কাছে আগলে না নিয়ে অনার কিলিং করে আপনারা নিজেরাই নিজের শ্ত্রু হয়ে উঠছেন!
এছাড়াও আশ্চর্যের বিষয়, ধর্ষণের মতো ফৌজদারি অপরাধ, ন্যক্কারজনক এবং জঘন্য ঘটনা ঘটলেও ধর্ষিতা কিংবা তার পরিবার ন্যায়বিচারটুকু পর্যন্ত পান না। একটি স্বাধীন, সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে এর চেয়ে বড় লজ্জার, দুঃখের ও আশ্চর্যের বিষয় আর কী হতে পারে?