আরো গতানুগতিক দিনগুলোর মতন ২০০১ এর ১১ ই সেপ্টেম্বরের সকাল টিও ছিল সুন্দর একটি সকাল নিউ ইয়র্ক সিটির মানুষের কাছে। কিন্তু চোখের পলকে জঙ্গি বিমান হামলায় ভেঙ্গে পরলো নিউ ইয়র্ক সিটির টুইন টাওয়ার ,ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। ভয়াবহ এই ঘটনা বদলে দিল নিউ ইয়র্কের মানুষের জীবন , সাথে বদলে দিল আর এক নারীর জীবন। তিনি আর কেউ নন ,আমাদের বাংলার মেয়ে,অদ্রিজা বিশ্বাস হেলিং, মিসেস ইন্ডিয়া ইউ. কে ২০১৯ প্রতিযোগিতা ফাইনালিস্টদের মধ্যে একজন। ভয়াবহ এই ঘটনার সময় অদ্রিজা ছিলেন টুইন টাওয়ারে। জীবন কে ফিরে পেলেন খুব আশ্চর্যজনক ভাবে।
জন্ম কলকাতাতে ,বড় হয়েছেন স্বপ্ননগরী মুম্বাইতে ,বর্তমান আছেন লন্ডনে। মুম্বাই IIT থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে কোলনবিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে, মাস্টার অফ ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন ওয়ারিক বিজনেস স্কুল থেকে এম বি.এ.পাস করেছেন।ছোটবেলা থেকে পড়াশুনার সাথে নাচ,গান, সেতারেও ছিলেন পারদর্শিনী। পেয়েছেন পুরস্কার। ” ওয়ারিক‘স গোট টেলেন্টস ” এ ফাইনালিস্ট ছিলেন ,এখনো অনেক সোশ্যাল প্লাটফর্মস এ গেয়ে থাকেন।কর্মজীবনেও পেয়েছেন সফলতা, স্বীকৃতি পেয়েছেন উদ্ভাবনী নেতার। বহুপ্রতিভাময়ী নারী ,মেধাবী,সুন্দরী হওয়ার সাথে সাথে একজন সুন্দর মনের মানবীও।
বাংলার এই মেয়ে অনেক প্রকার সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের সাথে জড়িত। নারী নির্যাতন ,মানব পাচারের বিরুদ্ধে চেষ্টা করেছেন রুখে দাড়াঁতে। সক্রিয়ভাবে গরীব ,অনাথ বাচ্চাদের জন্য কাজ করে চলেছেন।
জীবনে দেখেছেন অনেক ওঠানামা ,সিঙ্গেল মা হয়ে লড়তে হয়েছে বারবার কঠিন ,প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে।আইনগতভাবে লড়তে হয়েছে সরকারের সাথেও,মৃত্যুকে দেখেছেন কাছের থেকে। তবুও আত্মবিশ্বাস হারান নি ,এই তেজস্বীনী বাংলার মেয়ে। জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে শিখিয়াছে মানুষকে ভালোবাসতে। উনি মনে করেন প্রতিটি মানুষের মধ্যে কিছু সেরা গুণ থাকে ,তাকে খুঁজে বের করতে হয়.প্রতিটি প্রতিকূল পরিস্থিতি আমাদের মানসিকভাবে আরো দৃঢ় করে। সাহসিকতা,নিজের উপর বিশ্বাস ,অধ্যবসায় জীবনের যে কোনো লড়াই জিততে সাহায্য করে।
জীবনের এই মিশ্র অভিজ্ঞতা অদ্রিজা বিশ্বাস হিলিংকে পরিণত করেছে সম্পূর্ণ মানবীতে। প্রতিটি নারী তাঁর মিসেস ইন্ডিয়া পর্য্ন্ত আসার জীবন কাহিনী যেন তাঁর মত যে সব নারীরা লড়ছেন জীবনের কঠিন পরিস্থিতির সাথে তাঁদের প্রেরণা দিতে পারে –সেটাই বাংলার এই মেয়ের স্বপ্ন। তিনি বিশ্বাস করেন জীবনের কাছে হেরে যাওয়া নয়,নিজের ভাগ্য নিজেরাই লিখতে পারে সবাই নতুনভাবে,সুন্দরভাবে।
২০১৯ এর ১৪ ই এপ্রিল ,হিলটন ,লন্ডন ব্রিজ ,ইউ কে – একটি সুন্দর মুহূর্ত সম্পূর্ণ ভারতবাসীর জন্য। মিসেস ইন্ডিয়া ইউ কে প্রতিযোগিতাতে ফার্স্ট রানারআপ ও মিসেস ইন্টেলেক্চুয়াল পদবী জিতলেন এই ভারতীয় নারী। আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরো একবার গর্বিত হলেন বাঙালি।
অদ্রিজা বিশ্বাষ হেলিং এর ছোট একটি বার্তা এই পৃথিবীর জন্য ঃ
জীবন ছোট ! কে জানে কখন কি অলৌকিক ঘটনা ঘটে যায়! কিন্তু বিশ্বাস হারাতে নেই। জীবনের কঠিন লড়াই অতিক্রমের জন্যে প্রয়োজন কিছু ধৈর্য্য আর চেষ্টার!