এই পৃথিবীতে স্বপ্ন দেখতে কে না ভালোবাসে। স্বপ্নের মাধ্যমেই অনেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখেন। তবে কিছু সংখ্যক লোক আছেন যারা স্বপ্ন দেখেন অন্যের জন্য কিছু করার। আবার তার বিপরীতও আছে।
তিনি সনুরাণী দাস। স্বপ্ন দেখেন অন্যের জন্য কিছু করার। স্বপ্ন, শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকা শিশুদের শিক্ষিত করা। তাও আবার তাদের মধ্যে বাংলা ভাষার প্রসার ঘটানো।
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের টানবাজার সুইপার কলোনির প্রথম স্নাতক সনু। শিশুদের নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘ওরা জানতেই পারছে না ওদের জন্য পৃথিবীতে কত বিস্ময় অপেক্ষা করছে। অথচ বাংলা ভাষাটাই ওদের কাছে ভয়ের বিষয়। পড়াশোনায় আনন্দ পায় না। আমরা এই শিশুদের বিস্ময়ের সন্ধান দিতে চাই। প্রাথমিক পর্যায়ে ভালোভাবে বাংলা শেখাতে পারলে ওরা নিজেরাই নিজেদের স্বপ্নের জন্য ছুটবে’।
সনু এবং তাঁর দুই বান্ধবী মিনা ও পূজা নারায়ণগঞ্জের হরিজনদের মধ্যে প্রথম এসএসসি পাশ।
হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়ের শিক্ষিত করতে স্বপ্ন দেখছেন সনু।
১৫০টি পরিবারের ওই সুইপার কলোনিতে ১৯৬৪ সাল থেকেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। তবু ২০০৬ সালের আগে সেই কলোনির কেউ মাধ্যমিকের গণ্ডি অতিক্রম করতে পারেননি।
সনুর মতে, ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, পরিবারগুলোর অসচেতনতা ও আর্থিক অনটনই এর জন্য দায়ি। সুইপারদের মাতৃভাষা হিন্দি হলেও পাঠ্যবইগুলো বাংলায়। বাংলা বুঝতে না পারায় প্রাথমিক পর্যায়েই ছেলেমেয়েরা ঝরে পড়ে। স্কুলের শিক্ষকেরা ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন সংস্কৃতির হওয়ার কারণে পড়াশোনাটা শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে না। সনু বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ শেষ করার পরই আমি ও মিনা (সনুর বান্ধবী) ভাবলাম, শিক্ষক হতে হবে। শিশুদের বাংলা শেখানোর জন্যই শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা।’
মোটা অঙ্কের চাকুরি করার সুযোগ হাতে এলেও, তা করতে রাজি নন সনু। কলোনির শিশুদের নিয়েই কাজ করতে চায় সে।
সনুর প্রতিবেশিরা জানান, কোথাও নামমাত্র পয়সায় আবার কোথাও বিনা পয়সায় কলোনির শিশুদের পড়ান তিনি। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন সনু, মিনা দুজনেই। এখন পরীক্ষার অপেক্ষায় আছেন।