বিদ্যালয় ধসে যাওয়া আর দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধসে যাওয়া, পার্থক্য আছে কি কিছু ? এমন ভাবেই শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড)। শুধুমাত্র পাউবোর উদাসীনতায় যমুনার গর্ভে তলিয়ে গেল দীর্ঘ ৮৪ বছর পুরনো ডিগ্রি তেকানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ঘরে আগুন লাগলে, এক চৌবাচ্চা জল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করলে কি কাজে আসবে ? তেমনি অবস্থা হয়েছে পাউবোর ক্ষেত্রেও।
প্রাকৃতিক নিয়মে নদী ভাঙবে, গড়ে উঠবে। যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ের ভাঙন রোধে শুষ্ক মৌসুমে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বর্ষার শুরুতে ৫ হাজার বস্তা বালি ফেলে যমুনার গ্রাস থেকে বিদ্যালয় ঠেকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে ! বাঁচানো গেল না । শনিবার বিকেলে ধসে যায় এলজিডি নির্মিত তিনতলা বিদ্যালয় ভবনটি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, পাউবো যদি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করত, তাহলে আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এভাবে ভেঙে পড়ত না। যমুনা ভাঙতে ভাঙতে বিগত কয়েকবছরে একেবারে বিদ্যালয়ের কাছে চলে আসে। এমন শোচনীয় অবস্থাতেও নাক ডাকাচ্ছিল পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয়দের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এমনকি গণমাধ্যমকর্মীরাও এ বিষয়ে বারংবার পাউবো প্রকৌশলীদের সচেতন করেছিলেন। কিন্তু কুম্ভকর্ণের ঘুম ৬ মাসের আগে ভাঙলেও, যে ৫ হাজার বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী জানিয়েছেন, ৫ হাজার নয়, সেখানে প্রয়োজন ছিল আর প্রায় ১৫ হাজার বস্তার। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত ফেলা হয়নি। ফলে অতলে তলিয়ে গেল ১৯৩৫ সালে টিনের ঘরে পাঠদান শুরু করা বিদ্যালয়টি।
ডিগ্রি তেকানী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অতলে তলিয়ে যাওয়াতেই আশঙ্কা কিন্তু শেষ হয়নি। কাজিপুর ও সদরসহ জেলার ৯ টি উপজেলায় আরো ১৩৩ টি বিদ্যালয় এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ১০ টি বিদ্যালয়ের রয়েছে যমুনায় তলিয়ে যাবার আশঙ্কা। ইতিমধ্যে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, কতদিনে বিদ্যালয় স্থিতাবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়, আদৌ হয় কিনা ! নাকি আরেক উদাসীনতায় ডিগ্রির মতো তলিয়ে যায় ১০ টি বিদ্যালয় ?