কলকাতা: এই ঘটনায় একটু হৈ চৈ পড়েছে। বাস্তবেই এলজিবিটিকিউ যারা আছেন, তাঁদের সমাজ এখনো নিচু চোখে দেখে। এটা অবশ্যই তাঁদের হীনমন্যতা নয়। এটা সমাজের হীনমন্যতা। আমাদের আশেপাশে এমন প্রচুর আছেন।
যাই হোক, এবার পুরুষ হতে চান পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেয়ে সুচেতনা ভট্টাচার্য। লিঙ্গ পরিবর্তন করে সুচেতনা হতে চাইছেন ‘সুচেতন’।
লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য ইতিমধ্যে আইনি পরামর্শও নিতে শুরু করে দিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ে সুচেতনা।
উল্লেখযোগ্য যে, সম্প্রতি সুচেতনা ভট্টাচার্য একটি LGBTQ কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন। আর সেই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী একজন সুচেতনার লিঙ্গ পরিবর্তনের ইচ্ছে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করেছেন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেয়ে সুচেতনা ভট্টাচার্য একজন পরিবেশকর্মী, সমাজকর্মী এবং রাজনীতিবিদ। তবে অবশ্য সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়নি।
এবং মেয়ের এই সিদ্ধান্তে বাবার পুরো সমর্থন আছে বলে একটি সংবাদমাধ্যমকে ৪১ বছর বয়সী সুচেতনা জানিয়েছেন।
সুচেতনা মানসিকভাবে একজন পুরুষ। তাই শারীরিকভাবেও এখন পরিবর্তন চান। যাতে দোটানায় জীবনযাপন করতে না হয় আর। তাছাড়া তিনি একজন প্রাপ্তবয়স্ক।
সুপ্রভা রায় নামে একজন মহিলার পোস্ট থেকেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তনয়া সুচেতনার লিঙ্গ বদলের সিদ্ধান্ত এবং সাহসের বিষয়টি জানা যায়।
সুপ্রভা রায় লিখেছেন:
‘গৌরব মাসের গল্প’
সুচেতনা থেকে আজ সে সুচেতন।পিপলস রিলিফ কমিটির আয়োজিত এলজিবিটিকিউআইএ+ মানুষদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কর্মশালায় ওর সাথে প্রথম আলাপ।হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিই সুচেতন।
নিজেই নিজের কাছে বহু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে সুচেতন।নিজের গল্প টা নিজের পরিসরে ধরে রাখা ছিলো তার।স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কর্মশালায় কমিউনিটির ও কমিউনিটির বাইরের এত মানুষদের অংশগ্রহণে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা পেয়েছে সুচেতন।
পিতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ।মা মীরা ভট্টাচার্যের কিছুদিন আগেই বুকে নতুন করে পেশমেকার বসেছে।তারই মধ্যে সুচন্দা কে পেয়েছে জীবনসাথী হিসেবে।একইসাথে ঘর বেঁধেছে সুচেতন ও সুচন্দা।সুচেতন একটি অডিও ভিজুয়ালে ফ্রি ল্যান্সিং এর কাজ করে আর সুচন্দা একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত।
শারীরিক লিঙ্গ পরিচয় যাইহোক না কেন,ছোটবেলা থেকেই নিজেকে ছেলে মনে করা সুচেতন পেয়েছে পারিবারিক প্রেরণা।তার বাবাই তাকে ছোটবেলায় গালে সাবান লাগিয়ে দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে দিতেন।তাই নিজের প্রবণতায় তার বেড়ে ওঠা হয়ে উঠেছে স্বচ্ছন্দেই।শরীরে,মনে,সামাজিক প্রকাশনায় ট্রান্সম্যান রূপেই পরিচিত হয়েছে সুচেতন।
কিন্তু এবার সে বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় লিঙ্গের ও প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের সংগ্রামে অবতীর্ণ করতে চায় নিজেকে।আর সেদিনের পর থেকে নিজের ভিতর আটকে থাকা সুচেতন এখন অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠেছে।এলজিবিটিকিউআইএ+ কমিউনিটির মানুষদের জীবন যন্ত্রণা ও লড়াই সংগ্রামের সাথে মিশতে চলেছে সুচেতন।
আমাদের লড়াই তে যুক্ত হলো আরো এক যোদ্ধা।সার্থক হোক ওর সুচেতনা থেকে সুচেতন হবার লড়াই।মৌলবাদ,পুঁজিবাদ ও ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে আমাদের মিলিত অগ্রগতি তে সার্থক হোক ওর অংশগ্রহণ।সবাই ওর পাশে থাকুন,আমাদের সাথে থাকুন”।
আমরা অপরিবর্তিতভাবে লেখাটি তুলে ধরলাম।