অসমের ডিটেনশন ক্যাম্প গুলোর অবস্থা কেমন? এই ডিটেনশন ক্যাম্প গুলোর উন্নতির জন্য সরকার কী ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে? ডিটেইনি দের ডিপোর্ট করার ক্ষেত্রে সরকার গ্রহণ করেছে কী ধরণের পদক্ষেপ? এসব প্রশ্নের জবাব দিতে অসমের মুখ্যসচিবকে সুপ্রিম কোর্টে তলব করেছিলেন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। এই মামলার শুনানি ছিলো সোমবার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও কোর্টে হাজির ছিলেন না, অসমের মুখ্যসচিব অলোক কুমার। তাছাড়া তাদের হয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা যে হলফনামা পেশ করেছেন তাও মনপুত হয়নি প্রধান বিচারপতির। তাই অসমের মুখ্যসচিব অলোক কুমারের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করার হুমকি দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
রঞ্জন গগৈর রোষের মুখ থেকে অসমের মুখ্যসচিব কে বাঁচাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হল সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে। তিনি আশ্বাস দিলেন যে এই মামলার পরবর্তী শুনানীতে মুখ্যসচিব অলোক কুমার অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত থাকবেন। এবং আদালতের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তিনি দিল্লি ছড়বেন না। এভাবে আদালতকে আশ্বস্ত করে এ যাত্রায় সুপ্রিম কোর্টের রোষের মুখ থেকে রাজ্যের মুখসচিবকে বাঁচালেন তিনি। তবে অসম্পূর্ণ হলফনামা পেশ করায় সুপ্রিম কোর্টের ভৎসনা শুনতে হয়েছে তাকেও। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এতটা ক্ষোভের কারণ কী আসুন তা দেখে নেওয়া যাক।
অসমে বিদেশী শনাক্ত হওয়া লোকদের আটক করে রাখা ডিটেনশন ক্যাম্প গুলোর অবস্থা কেমন? সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা একটি মামলায় শুনানী গ্রহণ করে ডিটেনশন ক্যাম্প ও ডিটেইনিদের সম্পর্কে এধরণের অনেক তথ্য একথা জানতে চেয়ে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। এই বিষয়ে হলফনামা পেশ করতে সময় ১ এপ্রিল সশরীরে আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য অসমের মুখ্যসচিবকে নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু সোমবার এই মামলার শুনানী গ্রহণের সময় অসমের মুখ্যসচিব আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাদের হয়ে সলিসিটর জেনারেল যে হলফনামা পেশ করলেন তাও অসম্পূর্ণ। তাছাড়া হলফনামায় যা লেখা ছিলো তা দেখে ক্ষোভ সংবরণ করতে পারেননি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। কারন হলফনামায় লেখা ছিলো, অসমে বিদেশী চিহ্নিত ৭০ হাজার অনুপ্রবেশকারী উধাও হয়েছে। অর্থাৎ তারা নিখোজ। হলফনামায় এ ধরণের বয়ান দেখে ক্রোধে অগ্নি শর্মা হয়ে তিনি বলেন, ঘোষিত অনুপ্রবেশকারীরা যদি এভাবে ভ্যানিশ হয়ে যায় তাহলে পরে কী হবে? তাছাড়া আদালতের নির্দেশের পরও অস্মের মুখ্যসচিব কেন আদালতে উপস্থিত হলেন না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি । এই মামলাটি ছিল ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’ সংক্রান্ত। হর্ষ মন্দার নামে এক ব্যক্তি একাধিক ডিটেনশন ক্যাম্পে ঘুরে তথ্য সংগ্রহের পর একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, নাগরিকত্ব নির্ধারণে্র ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে। তাছাড়া ডিটেনশন ক্যাম্প গুলোর অবস্থা ভালো নয়। সেই মামলাই সোমবার শুনানির জন্য ওঠে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীনতিন সদস্যের বেঞ্চে। ওই বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি ছাড়াও রয়েছেন বিচারপতি দীপক গুপ্ত এবং বিচারপতি সঞ্জীব খন্না।
সোমবারের শুনানিতে সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা শীর্ষ আদালতে লিখিত হলফনামা দিয়ে জানান, ফরেনার্স ট্রাইবুনাল ৭০ হাজার অসমবাসীকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর আগেই কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে তাঁরা । সলিসিটর জেনারেলের মতে, ‘‘৭০ হাজার চিহ্নিত অনুপ্রবেশকারী অসমের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়েছে।’’ এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ডিটেনশন ক্যাম্প গুলোর উন্নতির জন্য সরকার কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে? ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকা লোকদের ডিপোর্ট করার জন্য সরকার কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে? তাছাড়া জনতার মধ্যে মিশে থাকা ৭০ হাজার নিখোঁজ অনুপ্রবেশকারীদের খুজে বের করতে সরকার কী ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে? ৮ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে সেসব কথা জানাতে সশরীরে সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত থাকতে হবে অসমের মুখ্যসচিব অলোক কুমারকে।