যে যাই বলুন না কেন, দুর্গোৎসবের আসল আনন্দ পুজো প্ৰস্তুতিতেই । উৎসবপ্ৰেমী বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। পয়লা বৈশাখে নতুন পঞ্জিকা হাতে আসার পরেই সবার আগে সকলের চোখ যায়- এবছর দুর্গা পুজো কোন তারিখ, একবার দেখি তো? চার ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মা দুর্গা মর্তে আসেন বাপের বাড়ি। আর ঘরের মেয়েকে আদর আপ্যায়নে ভরে তুলতে জাকজমকপূর্ণ উৎসবে মেতে ওঠেন আট থেকে আশি সকলেই। গোটা বিশ্ববাসী সমস্ত দুঃখ যন্ত্ৰণা, কষ্ট ভুলে গিয়ে পুজোর কটা দিন দুর্গোৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন।
এদিকে বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসবের ইউনেস্কো স্বীকৃতি উদযাপনে ১ সেপ্টেম্বর শোভাযাত্ৰা করতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্ৰী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোভাযাত্রায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ইউনেস্কোর ( UNESCO)র প্রতিনিধিদেরও। মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছেন তাঁরা।
তবে অতিমারি কোভিডের কারণে গত দুবছর পুজোর আনন্দে ভাটা পড়েছিল। তবে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ এ পুজো কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। যদিও এরপর কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে। মানুষ টিকা নিয়ে, মুখে মাস্ক পরে পুজো দেখতে বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিব্বি ঘর থেকে বেড়িয়েছেন। পাড়ায় পাড়ায় পুজোর প্যাণ্ডেলে গিয়ে জমায়েত হয়েছেন যুব প্ৰজন্ম, পুরনো সব বন্ধুরা। পুজোর কটা দিন বাড়িতে মা বাবার সঙ্গে সময় কাটাতে বিদেশএ চাকরিরত ছেলে মেয়েরা দেশে ফিরে এসেছেন। সকলেই মহাষ্টমীর অঞ্জলি হোক কিংবা বিসর্জনের সময় প্ৰার্থনা, সকলের মনেই একটাই চাওয়া ছিল ‘‘মা গো আসছে বছর সব মঙ্গলময় হয়। পৃথিবী যেন আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে..’’
হিন্দু শাস্ত্ৰ মতে মা দুর্গার আগমন এবং গমন যে বাহনে হয় তার ওপর নির্ভর করে গোটা বছরটা কেমন যাবে। শুরু হয়ে গিয়েছে দুর্গা পুজোর প্ৰস্তুতি। একেবারে কাটায় কাটায় একমাস ২০ দিন রয়েছে। ২০২২ সালে মা দুর্গার গজে আগমন। যার অর্থ শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা। উমা কৈলাসে ফিরবেন নৌকা করে। শস্ত্ৰমতে যার অর্থ শস্য বৃদ্ধি ও জল বৃদ্ধি। অর্থাৎ শস্য শ্যামলা হবে পৃথিবী।
গত বছর মা দুর্গার আগমন হয়েছিল ঘটকে, গমন করেছিলেন দোলায়।
কোন বাহন কীসের প্ৰতীক, একবার দেখে নেই-
দোলা- অর্থাৎ পালকি হল মহামারী বা মরকের প্ৰতীক।
নৌকা- নৌকা বন্যার প্ৰতীক আবার অনেকে মনে করেন, নৌকায় মা দুর্গার আগমন হলে চারদিকে ভাল ফসল হয়।
গজ- গজ বা হাতি হল শান্তি ও সমৃদ্ধির প্ৰতীক। গজে আগমন বা গমন হলে পৃথীবী শস্য শ্যামলা হয়।
ঘটক- ঘটক বা ঘোড়ার অর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির এলোমেলো অবস্থা। যুদ্ধ-বিগ্ৰহ, অশান্তি, বিপ্লব এইসবের সংকেত।
শাস্ত্ৰ মতে আরও বলা হয়, কোনও কোনও বছর মা দুর্গার আগমন ও গমন একই বাহনে হলে তা অত্যন্ত অশুভ।
প্ৰসঙ্গত, ২০১৯ সালে মা দুর্গার আগমন গমন হয়েছিলে ঘটকে। তার ফলেই অনেকে মনে করছেন অতিমারি করোনার কবলে পড়েছেন বিশ্ববাসী।
শাস্ত্ৰমতে বলা হয় মা দুর্গার সপ্তমীতে আগমন হয়। দশমীতে গমন হয়। আবার লোককথায় এও শোনা যায় যে মহালায়ার দিনই নাকি মা দুর্গা মর্তে এসে কুচপাতার তলায় আশ্ৰয় নিয়ে থাকেন। তবে এসব বলা কথা।
এবছর মা দুর্গার আগমন শুভ। গজকে মা দুর্গার সবচেয়ে ভাল বাহন বলে মনে করা হয়। মা দুর্গার কাছে সবার প্ৰার্থনা মা যে সকলের জন্য আনন্দ নিয়ে আসেন। এবছর মহালয়া ২৫ সেপ্টেম্বর রবিবার। মহাপঞ্চমী ৩০ সেপ্টেম্বর, মহাষষ্ঠী ১ অক্টোবার,মহাসপ্তমী ২ অক্টোবর, আহাষ্টমী ৩ অক্টোবার,মহানবমী ৪ অক্টোবার এবং মহাদশমী ৫ অক্টোবর। তাহলে আর দেরী না করে এখন থেকেই পুজোর কটা দিন কিভাবে কাটাবেন তার প্ল্যান টা রেডি করে নিন। কারণ পুজো এই এলো, তো এই শেষ হয় গেল। যা আনন্দ সব পুজোর আগের প্ৰস্তুতি পর্বেই।