গুয়াহাটি: আহা! আজ যে ভালোবাসার দিন! আজ যে বসন্তের দিন। প্রকৃতি ডাক দিয়ে যায় ভালোবাসার। মনের অজান্তে অনেক কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। হৃদয় আজ সাগর হয়ে উথলে পড়া শুরু করেছে। আজ যে ভালোবাসার দিন।
মনের অজান্তে কবি জীবনানন্দ দাশের মতো প্রেমিক হৃদয় বলে উঠতে চাইছে : ‘হৃদয়, তুমি সেই নারীকে ভালোবাসো, তাই/আকাশের ঐ অগ্নিবলয় ভোরের বেলা এসে/প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে অমেয় কাল হৃদয় সূর্য হবে/তোমার চেয়েও বেশি সেই নারীকে ভালোবেসে।’
আজ বসন্ত ভালোবাসার দিন। কোকিলের কুহুতানে জাগা মুখরিত বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে আজ পহেলা ফাগুনের দিনে হবে ভালোবাসার জয়গান।
এক হৃদয় থেকে অন্য হৃদয়ে আজ ভাষা পাবে। জেগে উঠবে দুই হৃদয়। ‘আমি তোমায় ভালোবাসি’— এর থেকে বড় শব্দ পৃথিবীতে আর নেই।
এত বড় পৃথিবীতে দুটো মনের মিলন হয়, এ যে কতবড় কথা!
বসন্ত ও ভালোবাসা মিলেমিশে একাকার হয়ে আজ ফাল্গুনী আমেজে মেতে উঠেছে হৃদয়।ফাগুনের আগুনলাগা উচ্ছ্বাস।
ঋতুরাজের দখিনা বাতাস দু’জনার হৃদয়-জমিনে ভালোবাসার ঢেউ তুলবে। বাসন্তী রঙের শাড়িতে খোঁপায় হলুদ গাঁদা আর মাথায় ফুলের টায়রার সুষমার শৈল্পিকতা ফুটে উঠবে তরুণীদের।
সর্বত্র তারুণ্যের উন্মাদনার ঢল শুরু হয়েছে সকাল থেকেই। বড় সুন্দর একটা পরিবেশ।
বসন্ত আর ভালোবাসার মিশেলের এমন দিনকে বরণ করতে ফুলের দোকান আর মার্কেটের শাড়ি-পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে গত কয়েকদিন ধরেই বেশ ভিড়।
বসন্তমিশ্রিত ভালোবাসার এমন দিনে পরস্পরের শুভেচ্ছায় সিক্ত হবে দুজন।
একে অপরকে উপহার দেবে কবিতা, ছন্দমিশ্রিত মনের বার্তা সঙ্গোপনে।
যা এতক্ষণ লিখলাম তা হয়ে আসছে এবং হবে প্রকৃতির নিয়মে। তবে ভালোবাসা শুধু একধরনেই হয় না। আমাদের জানার বাইরে বহু অজানা জগৎ আছে, আর সেটা আমরা জানিনা বলেই আমাদের সীমানায় আবদ্ধ জ্ঞান আর চোখ দিয়ে অপরকে যাচাই করতে যাই আর তাঁর নামের আগে বিশেষণ হিসেবে লাগিয়ে দেই ‘নষ্ট’।
আমি যাঁদের কথা বলতে চাইছি তাঁরা সমকামী, তাঁরা ট্রান্সজেণ্ডার। আজ্ঞে হ্যাঁ! তাঁদেরও একটা বিশাল একটা মহৎ জীবন আছে। তারাও ভালোবাসে মনপ্রাণ দিয়ে। এই ভালোবাসা কোন বিকৃত নয়, এই ভালোবাসা প্রকৃতি বিরুদ্ধ নয়। প্রকৃতিরই অঙ্গ। তাহলে আমরা কী পারিনা তাদের প্রেম-ভালোবাসা-জীবনে যে তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে সেগুলোকে সম্মান জানাতে?
আমরা অবশ্যই পারি, সবই পারি।
মূলত আমাদের সমাজ ছাঁচেঢালা সমাজ। এই ছাঁচের-যান্ত্রিকতার বাইরেও যে একটা পৃথিবী আছে, সেখানেও মানুষ বাস করে সেটা আমরা কল্পনাতেও আনতে পারি না। ফলে বাড়ছে হিংসা। আমরা সমকামীদের প্রেম মেনে নিতে পারছি না।
একজন একজন করে মানসিকতা পাল্টানোর চেষ্টা করি চলুন তো, আর যেন ঐ প্রেমিকদের আত্মহত্যা করে, গুমড়ে-হতাশায় মরতে না হয়, একবার সে চেষ্টাটা করে দেখি চলুন তো।
কীভাবে করবেন সে চেষ্টা?
নাহ! আমাদের একটি টাকাও খরচ করতে হবে না। শুধু আমাদের মনটা উদার করতে হবে।
আমাদের সামনে দিয়ে যদি কোন সমকামী হাতে হাত দিয়ে হেঁটে চলে যায় তাহলে আর আমরা কক্ষনো ব্যঙ্গ করবো না, অন্যকে ডেকে বলবো না ‘দেখো দেখো এরা সমাজ নষ্ট করছে’।। কী পারবেন না এটুকু সহানুভূতি দেখাতে তাদের প্রতি?
তারা আপনার কাছ থেকে সহানুভূতি চায় না, চায় সমাজ উন্নত হোক। তাদের ভালোবাসাও যেন স্থায়ী হয়! আমরা তো আমাদের নিচ মনগুলোকে একটু বড় করে তাদের এটুকু সাহায্য করতে পারি? তাই নয় কী?
চলুন আজ ভালোবাসা দিবসে শপথ করি –পৃথিবীতে সবাই ভালোবাসবে, কারো ভালোবাসা মরবে না, সবার সমান অধিকার। আমাদের মনে রাখতে হবে ভালোবাসা লিঙ্গনির্ভর নয়”।