কলকাতা: আজ মাতৃ দিবস। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভরে যাচ্ছে ছবিতে, আদরে। কিন্তু আজকের এই যুগে এসেও যদি আমাদের এভাবে ঘটা করে জন্মদাত্রীর জন্যে দিবস পালন করতে হয় তাহলে তো এটাই বলা হবে যে আমরা এখনো সচেতন হইনি। দিবস পালনের অর্থ এটাই “যে আরো একবার মনে করিয়ে দেয়া যে ওমুক আছেন, তাঁদের নিয়ে থাকা উচিৎ বা তাঁদের মনে করা উচিৎ। তার মানে আমরা এখনো মনেই করে উঠতে পারিনি”।
অনেকে বলবেন, একটি দিন বিশেষভাবে উদযাপন করার মধ্যে তো কোনো আপত্তি নেই! না, আপত্তি নেই– কিন্তু আপত্তিটা আরো বেশি থাকবে না যখন আপনি আপনার মা বা এই পৃথিবীতে নারীজাতি যতদিন আছে ততদিন তাঁদের সম্মান দেবেন!
একটি নির্দিষ্ট দিনে এমন উপচে পড়া ভালোবাসা দেখলে মেকি মনে হয় বৈকি! মেকি মনে হয় কারণ সারা বছর আমরা মায়েদের খুব কম যত্ন নেই। কম সন্তান আছেন যারা সত্যিকারের মায়ের যত্ন নেন।
এখানে পুরুষতান্ত্রিক পুরুষদের কথা যদি বলি, তাহলে তাঁরা ভেবেই নেন বিয়ে করবো মায়ের সেবার জন্যে। বিবাহিত স্ত্রী মায়ের সেবা করতে বাধ্য। কিন্তু সেই ছেলে কিন্তু বাধ্য নয়, বাধ্য করে স্ত্রীকে। কেন বাপু? তোমার মায়ের সেবা করার জন্যে আরেকটি মেয়েকে এভাবে কষ্ট দেয়া কেন? তুমি যদি নিজে না পারো তাহলে নার্স রাখো, কাজের লোক রাখো সেবার জন্যে। তুমি তো তোমার স্ত্রীকে ঘাড়ে গলায় চেপে বাধ্য করতে পারো না! সে যদি নিজের ইচ্ছায়, মানবিকতা খাতিরে করে সেটা ভিন্ন।
মা দিবস কোনো একটা নির্দিষ্ট দিনের নয়। আমাদের প্রতিদিন মায়েদের জন্য হওয়া উচিৎ! হাড়গোড় ভেঙে, মেরুদণ্ড ছিন্ন করে ইনজেকশন ঢুকিয়ে কোমর বাঁকা করে যে মা তোমায় জন্ম দিয়েছেন সে মায়ের জন্যে যদি তোমার এতটুকু সময় না থাকে যত্নের, তাহলে তুমি মানুষ নও!
মা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তাই নিরাপদ মাতৃত্ব এবং মায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত সবচেয়ে জরুরি। একদিন নয়, প্রতিদিনই নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে সচেতন হতে হবে।
সন্তান হিসেবে আমরা মায়ের প্রতি দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছি? মাকে কতটা সময় দিচ্ছি?
সন্তান জন্মদানের সময় অসহনীয় কষ্ট করেন গর্ভবতী মা। শারীরিক-মানসিক দুই ক্ষেত্রেই তার পরিচর্যার দরকার হয়। একটি সুস্থ শিশু জন্মদান নিশ্চিতে সুস্থ মাতৃস্বাস্থ্য নিশ্চিতের বিকল্প নেই।
মা দিবসে কয়েকটি কথা থাকবে:
# মায়ের প্রতি ভালোবাসা, দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করুন।
# কোনো আচরণে মা যেন কষ্ট না পান, দুঃখ না পান, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
# দিন শেষে মাকে সময় দিন। কথা বলুন। শরীরের খবর নিন।
#মায়ের কোনো অসুস্থতাকে অবহেলা করবেন না।
#মাকে নিয়ে অবসর সময়ে ঘুরে বেড়ান। সম্ভব হলে পৃথিবী ভ্রমণ করুন মাকে নিয়ে।
# মায়ের খাওয়া দাওয়ার দিকে খেয়াল রাখুন।