কলকাতা: সোশ্যাল মিডিয়া প্রচণ্ড পরিমাণে টক্সিক হয়ে গেছে। পরমব্রত আর বিয়ের নিয়ে চরম চর্চা শুরু হয়েছে। অথচ কেউ কারো ব্যক্তি স্বাধীনতা বিষয়টা বোঝেই না।
এই নিয়ে মুখ খুলেছেন তসলিমা নাসরিন!
“ফেসবুক ছেয়ে গেছে পরমব্রত আর পিয়ার বিয়ে নিয়ে নানা রকম মন্তব্যে। কেউ কটাক্ষ করছে, কেউ বলছে পিয়া আর অনুপমের স্ত্রী নয়, সুতরাং পিয়াকে অনুপমের প্রাক্তন একেবারেই বলা উচিত নয়। এসব হলো প্রেজুডিস।
কেন পিয়াকে অনুপমের প্রাক্তন বলা উচিত নয়? তারাই বলে বলা যাবে না, বলা উচিত নয়, যারা মনে করে একবার কোনও মেয়ের বিয়ে হলে ডিভোর্স হওয়া উচিত নয়, অথবা ডিভোর্স হলেও অন্য কাউকে আর বিয়ে করা উচিত নয়।
যারা বলছে, তারাই কিন্তু পরমব্রত আর পিয়াকে দেখলে সবার আগে ভাববে এই পিয়া একসময় অনুপমের স্ত্রী ছিল। আর অনুপম অন্য কাউকে বিয়ে করলে অনুপমকে দেখেই ভাববে, এবং বলবে ও একসময় পিয়ার স্বামী ছিল।
এইসব ভাবায় আর বলায় কেন রেস্ট্রিকশান থাকবে? প্রেজুডিস থাকলেই রেস্ট্রিকশান থাকে। ব্র্যাড পিট অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে বিয়ে করার পর কি মানুষ ভাবেনি এবং বলেনি ব্রাড জেনিফার অ্যানিস্টনের স্বামী ছিল? জেনিফার গার্নার যাকেই বিয়ে করুক এখন, লোকে বলবেই ও বেন আফ্লেকের স্ত্রী ছিল।
বেল আফ্লেক জেনিফার গার্নারকে বিয়ে করার পরও তো লোকে বলতো বেন ছিল জেনিফার লোপেজের প্রেমিক। সত্য শুনতে অসুবিধে কাদের হয়? সত্য অপ্রিয় কাদের কাছে ঠেকে? যারা জগদ্দল পাথরের মতো সমাজের ভেতরঘরে বসে থাকা কুসংস্কার আর প্রাচীন সব প্রথা ভাঙতে একটুও রাজি নয়।
কেউ কারও স্ত্রী ছিল বা স্বামী ছিল, কেউ কারও প্রেমিক ছিল বা প্রেমিকা ছিল — এগুলো যত বেশি বলা হবে, তত ভাঙ্গা হবে সেই সব প্রথা, যেসব প্রথা বলে ঈশ্বর জুটি বানিয়ে রাখে, সেই জুটি ভেঙে ফেলা মানে ঈশ্বরের পছন্দকে অস্বীকার করা, অথবা সুখী না হলেও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে, যেহেতু বিয়ে একবারই হয়, বা একবারই হওয়া উচিত, অথবা প্রেম করলে বিয়ে করতেই হবে, যেহেতু একজন শরীর ছুঁয়ে ফেলেছে।
যতই বলা উচিত নয় বলা হোক, বাংলাদেশের অভিনেতা গোলাম মোস্তফা যে লেখক শামসুদ্দিন আবুল কালামের প্রাক্তন স্ত্রীকে বিয়ে করেছিলেন, তা সকলেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বলেছে। এতে কার কী ক্ষতি হয়েছে? প্রথমে অস্বাভাবিক মনে হলেও পরে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে ওই বিয়ে। আসলে মানুষের স্বভাবকে বা প্রকৃতিকে সব সময় স্বাগত জানাতে হয়।
তা না হলে কঠিন কোনও অস্বভাবকে নিয়ম বানিয়ে ফেললে সেই নিয়মকে ভাঙতে যুগের পর যুগ খরচ হয়ে যায়।”