গুয়াহাটি “বিবেকানন্দ কেন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ কালচার”-এ অনুষ্ঠিত হল “রমানাথ ভট্টাচার্য ফাউণ্ডেশন, মুম্বাই” এর নবম বছরের সাহিত্যানুষ্ঠান। অসমিয়া ও বাংলাভাষার দুজন বরেণ্য কবি, অনুভব হক তুলসীকে ‘২০১৮ পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার’ ও কবি পীযূষ রাউত-কে ‘২০১৮ রামনাথ বিশ্বাস স্মৃতি সাহিত্য’ পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হয়।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অসমিয়া-বাংলা সাহিত্যের মিলনস্থান এই ‘রমানাথ ভট্টাচার্য ফাউণ্ডেশন’। কবিতার প্রতি থাকা গভীর প্রেমের ফলেই এই ফাউণ্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন রমানাথ ভট্টাচার্য। বর্তমান এই দায়িত্বে রয়েছেন রমানাথের ছেলে শ্যামাশিস ভট্টাচার্য।
২০১০ সাল থেকে ‘রমানাথ ভট্টাচার্য ফাউণ্ডেশন, মুম্বাই’ অসমিয়া সাহিত্য জগতের বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের পণ্ডিত ‘পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ স্মৃতি-সাহিত্য পুরস্কার’ ও বাংলা সাহিত্য জগতের সাহিত্যিককে ভূ-পর্যটক ‘রামনাথ বিশ্বাস স্মৃতি-সাহিত্য পুরস্কারে’ সম্মানিত করে আসছে। এই বছর পুরস্কার প্রাপ্ত দুজন কবিসহ গত কয়েক বছরের পুরস্কৃত মোট ১৮ জন কবির ছবিসহ সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ‘স্মারকগ্রন্থে’ প্রকাশ করা হয়। গ্রন্থ উন্মোচন করেন বিশিষ্ট গবেষক কটন কলেজের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ তথা সংস্কৃত বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপিকা নন্দিতা গোস্বামী ভট্টাচার্য । বর্তমান ‘স্মারকগ্রন্থ’এর দায়িত্বে রয়েছেন সুধাংশুশেখর ভট্টাচার্য ও সহযোগী সম্পাদক বাসব রায়।
প্রতি বছর মার্চ মাসের কোনো এক রবিবারে ‘রমানাথ ফাউণ্ডেশনের’ তরফ থেকে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন ফাউণ্ডেশনের সাধারণ সচিব শ্যামাশিস ভট্টাচার্য। মুখ্য অতিথি হিসেবে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রগবেষক, গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষার প্রাক্তন অধ্যাপক ড.উষারঞ্জন ভট্টাচার্য। কবি পীযূষ রাউত, অনুভব হক তুলসী, নন্দিতা গোস্বামী ভট্টাচার্য প্রমুখ গুণীজনের উপস্থিতিতে সভা আলোকিত হয়ে ওঠে।
তাছাড়া, ফাউণ্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা রমানাথ ভট্টাচার্যের লেখা অসম্পূর্ণ ‘স্মৃতির সরণি’ বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করেন ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার শক্তিশালী কবি সঞ্জয় চক্রবর্তী।
অসমিয়া কবি অনুভব হক তুলসীকে মানপত্র তুলে দেন অসমের বিশিষ্ট সমাজসেবক অজয় দত্ত। বাংলা সাহিত্যের কবি পীযূষ রাউতকে সম্মানিত করেন অধ্যাপক উষারঞ্জন ভট্টাচার্য।
দু-দফার অনুষ্ঠান সূচিতে দ্বিতীয় দফায় উঠে আসে কবি পীযূষ রাউত ও অনুভব তুলসীর অনুভব। পীযূষ রাউতের মতে, কবিতা সৃষ্টির কোনো পূর্ব-পরিকল্পনা থাকে না। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে কবিতা লিখে চলা কবি কবিতার প্রতি প্রেম অনুভব করেন কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়ে। তখন থেকে যাত্রা শুরু।
অসমিয়া কবি অনুভব ‘মাতৃভাষা’ শব্দের পরিবর্তে ‘মাটিভাষা’ কে বেছে নেন। তাঁর মতে আমাদের ‘মাতৃভাষা’ রয়েছে কিন্তু কোনো ‘পিতৃভাষা’ নেই। একটা লিঙ্গবৈষম্য বা সংকীর্ণতা কাজ করে এই শব্দে। ‘মাটিভাষা’য় পৃথিবীর জল, বায়ু সবকিছুর সাথে আমাদের ভালোভাবে পরিচয় হয়। ‘মাতৃভাষা’- ‘মাটিভাষা’র বিরোধ নয়, একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠুক, এই তাঁর আশা।