সৈয়দ মুস্তফা আলি বাঙালির ভোজন রসিকতা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে একবার বলেছিলেন, বেহেস্তে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না ,তাই তিনি বেহেস্তে যাবেন না। রবি ঠাকুর বলেছেন, ‘সব বাসনার সেরা বাসা রসনায়’।
পিঠা হল বাংলার নিজস্ব আদিম আভিজাত্যপূর্ণ খাদ্যদ্রব্য। বাঙালি কোথায় না যাচ্ছে। বাঙালির পিঠে কানাডাতেও উপস্থিত হল। কানাডার ম্যানিটোবা প্রভিন্সের রাজধানী উইনিপেগে প্রতিবছর পিঠে উৎসবের আয়োজন করা হয়।
প্রতিবারের মত এবারো অনুষ্ঠিত হল পিঠে উৎসব। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন কানাডা–বাংলাদেশ অসোসিয়েশনের ম্যানিটোবার প্রেসিডেণ্ট নাসরিন মাসুদ। তিনি সমগ্র কানাডাবাসির উদ্দেশ্যে বলেন যে, কানাডায় বসবাসকারি বাঙালিরা যেন তাঁদের সংস্কৃতিকে ভুলে না যান। কারণ বিদেশে থাকা মানেই নিজের ঐতিহ্যকে ভুলে যাওয়া নয়।
প্রচুর বাংলাদেশের মানুষ এই ভোজন উৎসবে পিঠে পুলি নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন। অনুষ্ঠানে কেবল যে পিঠারই পসরা ছিল তা নয়, বাংলাদেশের প্রচুর লোকসঙ্গীত, বিভিন্ন গান বাজনায় পূর্ণ এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করা হয় এবছর।
কানাডাবাসি বাংলাদেশি শিল্পীরা গান বাজনার আসরে অংশগ্রহণ করেন। কানাডার কমিউনিটি সেন্টারে ১১ জন সৌখিন পিঠে বিক্রেতা প্রায় ৩০ রকম পিঠে সাজিয়ে বসেন। দারুণ মেলা জমে ওঠে। তাঁদের সাজিয়ে বসা পিঠার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ভাপা, চিতাই, পাটি সাপটা, পুলি, দুধরাজ,মোয়া প্রভৃতি। সেই সঙ্গে বাহারি মিষ্টি, রসমলাই, দই তো ছিলই। লেখা পড়েই বোধকরি বাঙালির রসনায় জল চলে এল।
পিঠে মেলায় মাহমুদুল নবি সোহলে তাঁর সন্তানদের নিয়ে আসার কারণ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, কানাডায় জন্ম বলেই তো আর দেশজ খাবারকে ভুলতে নেই। তাহলে জাতির ঐতিহ্য বজায় থাকবে না। তিনি তাঁর সন্তানকে বাংলাদেশের পিঠা পুলির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। কানাডায় অনুষ্ঠিত পিঠা মেলা বংগবাসির ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে।
বাংলাদেশের পিঠা বিক্রেতারা সুদূর কানাডার পিঠা অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন ব্যবসায়ী হিসেবে নয়। একজন দরদি বাঙালি হিসেবে নিজের সংস্কৃতি ধরে রাখার তাগিদে। এই দরদ, আবেগ বাঙালির রক্তে প্রবাহিত হয়ে চলেছে।