শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ জঙ্গিহানার পর সিংহলি মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে বোরখা। শ্রীলঙ্কার এমন সাহসী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্বের অনেক বুদ্ধিজীবী মহল।
যারা বরাবরই মহিলাদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সরব হন তাদের জন্যে এমন সিদ্ধান্ত সত্যি বাড়তি পাওনা।
বাড়তি পাওনা লেখিকা তসলিমা নাসরিনের জন্যও।
মহিলাদের স্বাধীনতা আর অধিকার আদায়ে বিভিন্ন সময় সরব হতে দেখা যায় বাংলাদেশি এই লেখিকাকে।
বোরখার বিরুদ্ধে এর আগেও তসলিমা অনেকবার সরব হয়েছেন। একাধিকবার তিনি বলেছেন, বোরখা নিষিদ্ধ করা উচিত। কিন্তু তাঁর প্রতিবাদ অচিরেই হারিয়ে গিয়েছে। উল্টো এমন বক্তব্যের জন্য সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে।
তবে, বলা যেতেই পারে, শ্রীলঙ্কার এমন সিদ্ধান্তের খবরে, এবার সেই সমালোচকদের মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এদিকে, সাহসী সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার করেছেন তসলিমা। সোশ্যাল সাইটে সুর চড়িয়ে পর্দাপ্রথার বিরোধিতা করে নিজস্ব মতামত দাখিল করেছেন এই নারীবাদী লেখিকা।
ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘শ্রীলংকা বোরখা নিষিদ্ধ করেছে, জনমানুষের নিরাপত্তার জন্য। বোরখা পরে আত্মঘাতি বোমা হেঁটে বেড়াচ্ছে, আর আমরা তাকে নিরীহ মেয়ে মানুষ ভেবে তার আশে পাশে নিরাপদ বোধ করছি, এই বোকামোর দিন শেষ হয়েছে। বোরখা কয়েক ধরণের মানুষ পরে, ১ দোযখে যাওয়ার ভয়ে ধর্ম দ্বারা মগজধোলাই হওয়া মেয়ে, ২ আত্মীয় স্বজনের চাপে বাধ্য হওয়া মেয়ে, ৩ আত্মঘাতী বোমা, ৩ জেল পালানো দাগী আসামি, ৪ ক্রিমিনাল যার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়েছে , ৫ চোর, ৬ ডাকাত, ৭ খুনী’।
‘বোরখা পৃথিবীর সব জায়গায় নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। বোরখা নিষিদ্ধ হওয়ার পর মেয়েরা মানুষের অধিকার নিয়ে চলাফেরা করতে পারবে, চলমান কারাগারের ভেতর মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ার শাস্তি ভোগ করতে হবে না, নামপরিচয়হীন অবয়বহীন একটি ভূতুড়ে জীবন যাপন করতে হবে না। মেয়েদের জন্য এর চেয়ে বড় সুখবর আর কী হতে পারে! যে মেয়েরা বলে বোরখা পরতে তাদের ভালো লাগে, বা এটা তাদের মানবাধিকার, তাঁরা মগজধোলাই হওয়ার কারণে বলে’।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে ইস্টার সানডেতে কলম্বোয় ধারাবাহিক বিস্ফোরণে প্রায় চার শতাধিক লোক নিহত হয়। এ ঘটনার নেপথ্যে ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এর মদত থাকার তথ্য উঠে আসার পর সন্দেহ গিয়ে পড়েছে সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর। সাধারণত মুসলিম মহিলারাই পথেঘাটে বেরোন বোরখায় মুখ ঢেকে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা প্রশাসন মনে করছে, তদন্তে বাগড়া দিচ্ছে এই বোরখা। তাই সেখানে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে বোরখা। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘জাতীয় সুরক্ষার স্বার্থে বোরখার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুখ ঢেকে প্রশাসনের পক্ষে নাগরিকদের শনাক্ত করার কাজ কঠিন করে দেবেন না’।